শরীয়তপুর প্রতিনিধি : নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ২ শত ৩৪ পৌসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে দেশের সর্বকনিষ্ঠ পৌরসভা ভেদরগঞ্জে মনোনয়ন প্রত্যাশী আ‘লীগ প্রার্থীদের।

প্রথম বারের মত দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে সরকার দলের ৫ সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। নির্বাচন করার মত এখনো বিএনপির কোন প্রার্থীর নাম জানা যায়নি। তবে আদা জল খেয়ে লেগে পরেছেন বর্তমান মেয়র ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বেপারী। নৌকা প্রতীক দখলে নিতে তারা দুজনই শতভাগ আশাবাদী ।

মাত্র শোয়া ২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশের সর্ব কনিষ্ঠ ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৫৩ জন। ১৯৯৭ সালে ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের গৈড্যা গ্রাম, রামভদ্রপুর ইউনিয়নের সূর্যদীঘল গ্রামের একাংশ ও নারায়নপুর ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের একাংশ নিয়ে গঠিত হয় ভেদরগঞ্জ পৌরসভা। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম এবং ২০০৪ সালে দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন তৎকালিন উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি ও রামভদ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বেপারী। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনেও প্রয়াত আব্দুল হাই বেপারীকে তৃতীয় বারেরমত দলীয় মনোনয়ন প্রদান করা হয়। কিন্তু সে সময় দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি বাধ সাদে যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নান হাওলাদার। তিনি আব্দুল হাই বেপারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে মেয়র নির্বাচিত হন।

এবারের আসন্ন নির্বাচনেও এই পৌরসভায় আওয়ামীলীগের ৫ প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় ব্যাপকভাবে লবিং শুরু করেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান মেয়র উপজেলা আ‘লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান বেপারী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার রাড়ী, প্রাক্তন মেয়র প্রয়াত আব্দুল হাই বেপারীর ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ আইন বিষয়ক সম্পাদক, এ্যাডভোকেট রিয়াজ মাহমুদ (সুমন) ও মহিলা আ‘লীগ নেত্রী বর্তমান কাউন্সিলর তানিয়া জাহিদ। মনোনয়ন পেতে ৫ সম্ভাব্য প্রার্থী দৌড় ঝাপ করলেও মান্নান হাওলাদার ও মান্নান বেপারীর মধ্যেই মুল লড়াই হবে বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের অনেক নেতা কর্মীই জানিয়েছেন এবারের মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে স্থানীয় সাংসদ (প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের জ্যাষ্ঠ পূত্র) নাহিম রাজ্জাকের উপর। এছারাও ৯টি ওয়ার্ডে অন্তত ৩৫ জন নারী ও পুরুষ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু বিএনপি সমর্থিত কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে ইচ্ছুক বলে এখনো জানা যায়নি।

মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী এ্যাডভোকেট রিয়াজ মাহমুদ সুমন বলেন, আমার বাবার হাত ধরেই এই পৌরসভা যাত্রা শুরু করেছিল। তিনি দীর্ঘ দিন ভেদরগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেছেন। একটি অনুন্নত জনপদের মানুষকে তিনি আলোর পথে এনেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল এই পৌর এলাকাকে একটি আধুনিক শহরের রূপান্তরিত করার। আমি আমার বাবার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাই। আশা করি আমার বাবার অবদানের কথা ভেবে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।

ভেদরগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত ৭,৮ও ৯ নং ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর মহিলা আ‘লীগ নেত্রী তানিয়া জাহিদ বলেন, এই পৌসভার অর্ধেক ভোটার নারী। আমি নারী ও শিশুদের অধিকার আদায় ও উন্নয়নের জন্য কাজ করার সুযোগ চাই। তাই আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল মান্নান বেপারী বলেন , তৃনমূলের সকল নেতা-কর্মীরা এবার আমাকে নিয়ে নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তাদের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে আমি মাঠে নেমেছি। বিগত দিনে আমার ত্যাগের কথা বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে এটাই আমি বিশ্বাস করি।

বর্তমান মেয়র আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, আমি দল থেকে মনোনয়ন পাবো এটা শত ভাগ নিশ্চিত। কারন, বিগত ৫ বছরে আমি ভেদরগঞ্জ পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। মনোনয়ন না পেলে আগের বারের মত বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমনটি হলে আমার কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের সাথে আলোচনা করে, তাদের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, মনোনয়ন প্রদানের রূপরেখা কি হবে এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল সভা করবে। দলীয় নীতি অনুসরণ করেই নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রদান করা হবে। তবে আমার কোন ব্যক্তিগত পছন্দ নেই। সংগঠনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের যথাযথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

(কেএনআই/এএস/নভেম্বর ২৬, ২০১৫)