নিউজ ডেস্ক : এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আসছে দেশের সুবিধা বঞ্চিত কর্মজীবী পথশিশুরা। আগামি ৩১ মে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

দেশের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং খাতে আনা ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু কিশোরদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা তৈরির জন্য ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর নেতৃত্বে আটটি এনজিও এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে। প্রাথমিকভাবে দশটি ব্যাংক পথশিশু ও কর্মজীবী কিশোরদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নিয়েছে। ধীরে ধীরে সব ব্যাংকে এ কার্যক্রম চালু করা হবে বলে জানা গেছে।

যে দশ ব্যাংকে এ হিসাব চালু করা হবে সেগুলো হলো- রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।

পথশিশু ও কর্মজীবী কিশোরদের পক্ষে হিসাব পরিচালনার দায়িত্বে মনোনীত এনজিওগুলোর পরিচালনা পরিষদ বা ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে হিসাব পরিচালনাকারী কর্মকর্তা মনোনীত হবে।

এসব শিশু কিশোরদের নামে সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব খোলা হলেও তাদের পক্ষে হিসাব পরিচালনা করবে এনজিও প্রধিনিধিরা। তবে ফরম ও অর্থ জমার বইতে হিসাবধারীদের অনুস্বাক্ষর থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট এনজিওর পরিচালনা পরিষদ বা ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনে হিসাব পরিচালনাকারী পরিবর্তিত হতে পারে।

একইভাবে এসব শিশুদের ব্যাংক হিসাব চেকিং বা নন চেকিংও হতে পারে। তবে এ সব হিসাবের বিপরীতে অনলাইন লেনদেনের সুবিধা দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। এতে করে কোনো প্রকার ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবে না তারা।

পথশিশু ও কিশোরদের হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে কেওয়াসি এর ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তবে হিসাব পরিচালনাকারীদের যথাযথ কেওয়াসি নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে হিসাবধারীর বয়স ১৮ বছরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিচালনাকারী এনজিও কর্মকর্তারা দায়িত্ব হতে বিমুক্ত হয়ে যাবে। এসব হিসাব থেকে কোনো প্রকার সার্ভিস চার্জ কাটতে পারবে না ব্যাংকগুলো। হিসাবের দৈনিক স্থিতির ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সঞ্চয়ী আমানতের সুদের হার বছরে দুইবার মুনাফা দেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু কিশোরদের হিসাবগুলো তিন মাস অন্তর মোট জমা এবং উত্তোলনের বিবরন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পরবর্তী ত্রৈমাসিকের তিন সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। যেসব বেসরকারী সংস্থা পথশিশু ও কর্মজীবী এসব শিশুদের ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে আগ্রহী তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হবে।

এর আগে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে এসব পথশিশু ও ক্ষুদ্র কর্মজীবী শিশুদের দশ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে বেশ কিছু নিয়ম পরিপালনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, যাদের কেউ নেই তাদের সঞ্চয়ের আওতায় আনার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এনজিও এর সহায়তায় এটা করা হবে। আমাদের দেশের অধিকাংশ পথশিশুদের কোনো অভিভাবক নেই। তাদের আয়ের সামান্য টাকা যাতে নিরাপদে ব্যাংকে রাখতে পারে এজন্য এ হিসাব খোলা হচ্ছে। এর ফলে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।

(ওএস/এস/মে ২৭, ২০১৪)