নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাইয়ে বিলের বাঁধে খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন ময়েন উদ্দীন। আর সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীও হয়েছেন তিনি। অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা । তার সফলতা দেখে ওই এলাকার অনেক বেকার যুবক বর্তমানে হাঁস পালন শুরু করেছে।

আত্রাই উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে একটু পশ্চিম দিকে তাকালেই দেখা যাবে বিলে ঘেরা দমদমা গ্রাম। আর বিলের সেই বাঁধ এখন হাঁসের খামারে পরিণত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে অনেক যুবক বিলের বাঁধে গড়ে তুলেছে একাধিক হাঁসের খামার। এদের মধ্যে ময়েন উদ্দীনের হাঁসের খামার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমানে তার খামারে হাসের সংখ্যা প্রায় ৫/৬শ’।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে ময়েনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, অভাবের সংসারে পড়ালেখা করতে পারেননি। নিজে নিজে কোনো কিছু করার চিন্তা করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্নটা আর সত্যি হয়ে ওঠে না। অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেন, হাঁসের খামার গড়ে তুলবেন। কিন্তু হাঁস পালন সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না তার। উপজেলার পার্শ্ববর্র্তী আহসানগঞ্জ হাট এলাকায় গিয়ে খোলা জলাশয়ে বিলের বাঁধে হাঁস পালন করা দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। অনেক কষ্টে কিছু টাকা জোগাড় করে মাত্র ৫০টি হাঁস কিনে শুরু করেন তার হাঁস চাষের যুদ্ধ। কঠোর পরিশ্রম করে ৩ বছরের মধ্যে এ পদ্ধতিতে হাঁস চাষ করে লাভবান হন তিনি। এরপর থেকে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তাছাড়া ময়েন তার বাড়িতে গড়ে তুলেছেন হাঁসের হ্যাচারী। নিজের হ্যাঁচারীতে তিনি এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছেন।


বিলের বাঁধে হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন একটি খরচের প্রয়োজন পড়ে না। অল্প খরচে লাভও আসে দ্বিগুন। খামারে একটি হাঁসের জন্য যে পরিমান খরচ হয়, খোলা বিল এলাকায় সে খরচ অর্ধেকেরও কম। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ নানান খাবার সহজেই পায়। এ কারণে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। বিলের খোলা জায়গায় খাবার খাওয়ার জন্য হাঁস ডিমও দেয় অনেক বেশি। এছাড়া হাঁস রাখার জন্য কোনো ঘর বানাতে হয় না। বাঁধের উপর পলিথিন দিয়ে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা বানানো যায়।

এ ব্যাপারে ময়েন জানান, খোলা বিলে একটি হাঁসের জন্য খরচ হয় সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস পর হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস ২৫০ থেকে ২৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। নিজের হ্যাচারীতে বাচ্চা উৎপাদনের কারণে ময়েনের হাঁস পালনের খরচ অন্যদের তুলনায় অনেক কম। তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে তার ৬ মাস কাটে বিলের বাঁধে। বাকি সময় থাকে হ্যাচারী নিয়ে। হাঁসের ডিম যখন আকারে ছোট হয়ে আসে বা ডিম দেয়া একেবারে কমে গেলে সেই হাঁস বিক্রি করে দেয়া হয়। সেখান থেকে লাভ হয় ২থেকে আড়াই লাখ টাকা।

হাঁস চাষে ময়েনের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই গড়ে তুলেছেন বিলের বাঁধে হাঁসের খামার। সবাই কম-বেশি লাভবান হচ্ছেন আর দূর হচ্ছে এলাকার বেকারত্ব। ময়েনের মতো বাঁধের ধারে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছে ওই এলাকার বেশ কয়েকজন হাঁস খামারী। এদের প্রত্যেকের খামারে হাঁসের পরিমান ৩ থেকে ৪শ’। অপর একজন হাঁস চাষী জাকারিয়া জানান, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বনির্ভর হওয়া যায়। তার মতে, পড়ালেখা করার ফাঁকে এই কাজ করাটা কোনো ব্যাপার নয়। তাই এখন তাদের মুখে একটি-ই শ্লোগান, “করবো মোরা হাঁসের চাষ, থাকবো সুখে বারো মাস”।

(বিএম/এইচআর/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫)