লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি :  আজ মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) লোহাগড়া থানা পাক-হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লোহাগড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে লোহাগড়া থানাকে হানাদার মুক্ত করে উড়িয়েছিল লাল সবুজের পতাকা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও লোহাগড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয় নাই কোন স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিসৌধ।

ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লোহাগড়ার উত্তরাঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়। এরপর পাক হানাদার বাহিনী লোহাগড়া থানায় সশস্ত্র অবস্থান গ্রহন করে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মধুমতি নদীর কালনাঘাটে ৭ ডিসেম্বর রাতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, ৮ ডিসেম্বর ভোরে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া থানা আক্রমন করা হবে।

তৎকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য শরীফ খসরুজ্জামান, আবুল হোসেন তালুকদার খোকন, মরহুম কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী, মরহুম লুৎফর রহমান, ঈমান আলী, কবীর হোসেন, দিদার হোসেন, হাবিবুর রহমান, মোস্তফা কামাল তাজসহ ৪০/৫০ জনের একদল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ৮ ডিসেম্বর ফজরের আযানের সাথে সাথে পশ্চিম দিক থেকে লোহাগড়া থানা আক্রমন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত আক্রমনে হতচকিত হয়ে পড়ে পাক বাহিনীর রেঞ্জার সদস্যরা। এ সময় থানায় অবস্থানরত রেঞ্জার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে থানার পূর্ব দিকে দিয়ে পালিয়ে যায়। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা ও পাক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ। ৫ ঘন্টা ব্যাপী এ যুদ্ধ চলাকালে থানা অভ্যন্তরে সম্মুখ যুদ্ধে কোলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান (২০) ও যশোর সদর উপজেলার জঙ্গল বাঁধাল গ্রামের মোস্তফা কামাল তাজ (২৮)নিহত হয়।

উল্লেখ্য যে, নিহত হাবিবুর রহমানকে লোহাগড়া থানার অভ্যন্তরে কবর দেওয়া হয় এবং মোস্তফা কামাল তাজকে ইতনা স্কুল ও কলেজ চত্বরে কবর দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে তৎকালীন ওসির সহযোগিতায় হাবিবুর রহমানের কবরটি টাইলস দিয়ে বাঁধানো হলেও ইতনায় শহীদ মোস্তফা কামালের কবরটি পড়ে রয়েছে অবহেলা আর অনাদরে। থানা আক্রমনের সময় মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে কুখ্যাত রাজাকার ও পুলিশ সদস্য খালেক ও নড়াইলের আশরাফ রাজাকারসহ প্রায় ২০ জন মানুষকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে গ্রেফতার হয় ১০ জন পুলিশসহ ২২ জন রাজাকার। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে নিজেদের আয়ত্বে আনেন। সকাল ৯টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী থানায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। থানা হানাদার মুক্ত হওয়ার খবরে উল্লসিত সাধারণ মানুষেরা স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আনন্দ মিছিল করে রাস্তায় নেমে আসে। এরপর ৮ ডিসেম্বর সারাদিনই লোহাগড়ার বিভিন্ন এলাকায় জনতা বিজয় মিছিল করে।

সকালে ভোরের সুর্য ওঠার সাথে সাথে লোহাগড়ার সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা পত্ পত্ করে উড়তে থাকে। লোহাগড়া থানা মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

(আরএম/এইচআর/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫)