মাঈনুল ইসলাম নাসিম : আর ৮৫ ইউরো নয়, এখন থেকে মাত্র ৫৫ ইউরোতে ডিজিটাল পাসপোর্ট হাতে পাবেন গ্রীস প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত ২৮ মে বুধবার থেকে ইতিমধ্যে কার্যকরও হয়েছে। এথেন্সে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ এই প্রতিবেদককে সুসংবাদটি নিশ্চিত করেছেন। তবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা আবেদন করবেন, শুধুমাত্র তারাই ৫৫ ইউরোর এই বিশেষ হ্রাসকৃক ফি’র সুযোগ পাবেন।

হাতে লেখা সবুজ পাসপোর্টের দিন মূলত. এভাবেই শেষ হতে চলেছে অবশেষে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশান (ICAO) ইতিমধ্যে তার সদস্য দেশসমুহকে জানিয়ে দিয়েছে, ৩১ মার্চ ২০১৫ তারিখের পর থেকে শুধুমাত্র মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) ধারী যাত্রীরাই যে কোন আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণ করতে পারবেন। পৃথিবীর নানা প্রান্তে অধিকাংশ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেই ইতিমধ্যে ‘এমআরপি’ ইস্যু হচ্ছে। প্রবাসীদের অনেকে আবার দেশে যাবার সুবাদে বাংলাদেশ থেকেই কাজটি সেরে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন।

যেসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস বা কোন কনস্যুলেট অফিস নেই, ঐসব দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিষয়টি কতটা বাড়তি ব্যয়বহুল এবং তা লাঘবের তেমন কোন দিক নির্দেশনা সরকারের তরফ থেকে না আসায় বহু দেশে উদ্বেগে আছেন অনেকেই। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার চলমান অস্থিরতাও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে দারুণভাবে। দক্ষিণ ইউরোপিয় দেশ গ্রীসের অবস্থা আবার রীতিমতো ধ্বংসাত্মক বেশ কয়েক বছর ধরেই। দেশটিতে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশির বসবাস, যাদের অর্ধেকের বেশির নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। যাদের আছে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠেরই দিনাতিপাতে নাভিশ্বাস।

গ্রীসের বাংলাদেশ কমিউনিটির তরফ থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিভিন্ন পন্থায় দাবি জানানো হয়েছিল, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)’র বাধ্যতামূলক ফি ৮৫ ইউরোর পরিবর্তে তা যাতে স্থানীয় প্রবাসীদের সাধ্যের সীমারেখার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রীসের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ড. জয়নুল আবেদিন এবং সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদারের নেতৃত্বে এবং অন্যান্য বিভিন্ন সংগঠনের সক্রিয় সমর্থনে দাবির পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয় সময়ের ব্যবধানে।

গত বছরের গোড়ার দিকে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ দায়িত্ব নিয়ে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের বোঝাতে সক্ষম হন, কমিউনিটির তথা গ্রীস প্রবাসী খেটে খাওয়া হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের এই ন্যায়সঙ্গত দাবী কতটা যৌক্তিক। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ২৭ মে মঙ্গলবার ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এসে পৌঁছে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসে।

মাত্র ৫৫ ইউরোতে ৫ বছর মেয়াদী ডিজিটাল পাসপোর্ট করতে পারার সুসংবাদে ইতিমধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সবাই। বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে জনতার দাবিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য।

এদিকে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের পালিটিক্যাল কাউন্সিলর ও হেড অব চেন্সরি মোহম্মদ তারিকুল ইসলাম এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগ দিচ্ছেন নয়া কাউন্সিলর হিসেবে। এর আগে তিনি দুবাই কনস্যুলেট ও মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাসে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
(এএস/মে ২৯, ২০১৪)