জয়পুরহাট প্রতিনিধি : জেলার জামালপুর এলাকার প্রকৌশলী রুহুল ইসলামের বাগানে এবারও থোকায় থোকায় আঙ্গুর ধরতে শুরু করেছে। বৃষ্টির অভাবে আঙ্গুর ধরতে এবার কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জয়পুরহাটের মাটি আঙ্গুর চাষের উপযোগী এবং তা মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রকৌশলী রুহুল ইসলামের জমির আঙ্গুর সুস্বাদ ও মিষ্টি একথা জানান বাগানের তত্ত্বাবধায়ক জিল্লুর রহমান।

রুহুল ইসলাম ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলের প্রধান প্রকৌশলী। ৬ বছর আগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া ভিক্টোরিয়া প্রদেশের মিলডোয়ায় এক আঙ্গুর খামার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।

জয়পুরহাট জেলার ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট সম্পর্কে জেনে অস্ট্রেলিয়ার ওই খামারীর উৎসাহ ও পরামর্শে ২০০৯ সালে বীজবিহীন ২ জাতের ১ হাজার আঙ্গুরের চারা অস্ট্রেলিয়া থেকে আনার ব্যবস্থা করেন।

চারাগুলোর নাম হচ্ছে- মেনিনডি, ক্রিমলন ও সিডলেস জাত। রুহুল ইসলাম তার ৬ বিঘা জমির উপরিভাগের মাটি তুলে ২ ফুট বালু ও মুরগীর বিষ্ঠা মিশিয়ে জমি তৈরি করেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা এই চারা থেকে তিনি আরো ২২৫টি চারা তৈরি করে ১ হাজার ২শ’ টি চারা জমিতে লাগান। আঙ্গুরের গাছকে সুরক্ষার জন্য আরসিসি খুটি ও জিআই তার দিয়ে তৈরি করেন ঝাংলা (মাচং)। অস্ট্রেলিয়ার এই খামারির পরামর্শে তিনি আঙ্গুর বাগানের নিবিড় পরিচর্যা করতে থাকেন। এ বাগান পরিচর্যার জন্য ৬ জন লোক সার্বক্ষণিক কাজ করেন এবং বাগান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রুহুল ইসলামের ছোট ভাই জিল্লুর রহমান বাগান দেখাশুনা করেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, রোগ-বালাই তেমন না থাকলেও আঙ্গুর পুষ্ট ও মিষ্টির কারণে পাখির হাত থেকে রক্ষায় পলিথিনে আঙ্গুরের থোকাগুলো ঢেকে দিতে হয়। প্রথম লাগানোর ১ বছর ৮ মাস পর রুহুল ইসলামের বিশাল বাগানে আঙ্গুর ফলের থোকাগুলো ঝলমল করতে দেখে জিভে পানি আসার পাশাপাশি মনও কেড়েছিল।

এক একটি থোকাতে ১৫ থেকে ৪৫টি আঙ্গুর রয়েছে। যার ওজন ১শ থেকে ৩৫০ গ্রাম। ২৬০ টাকা কেজি দরে গত বছর আঙ্গুর বিক্রি করেছেন পরীক্ষামূলকভাবে। তবে বৃষ্টির অভাবে আঙ্গুর ধরতে এবার কিছুটা বিলম্ব হয়েছে এবং আঙ্গুরের পরিপক্কতা আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বলে জানান রুহুল ইসলাম।

আঙ্গুর গাছ থেকে বছরে ২ বার ফল পাওয়া যায়। প্রথম পর্যায়ে দেড় টন আঙ্গুর পেয়েছেন বলে জানান তিনি। এ গাছ থেকে আরো ১০ হাজার চারা তৈরি করেছিলেন। আঙ্গুরের পাশাপাশি চারা বিক্রি করেও তিনি মোটামুটি ভাল টাকা আয় করেন। তার এই আঙ্গুর বাগান তৈরি পরিচর্যায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল বলে তিনি জানান।

রাজশাহী বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, জয়পুরহাটের মাটি আঙ্গুর চাষে উপযোগী। জয়পুরহাটের কৃষকরা আঙ্গুর চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল হান্নান বাসসকে বলেন রুহুল ইসলামের আঙ্গুর মিষ্টি এবং সুস্বাদ বলে শুনেছি।

(ওএস/এস/মে ২৯, ২০১৪)