লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি:নড়াইলের লোহাগড়ায় সরকারী নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শণ করে চলছে ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিকের রমরমা ব্যবসা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় চরম অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের নিয়ে রীতিমত প্রতারণা করা হচ্ছে এ সব প্রতিষ্ঠানে।

ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিকে মালিকরা সহজ সরল রোগীদের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এ যেন ‘আলা দ্বিনের আশ্চর্য প্রদীপ জ্বালানো’র এক যাদুকরি ব্যবসা ! আর এই আলা দ্বিনের আশ্চর্য প্রদীপ দেখে অসৎ, দুর্নীতিবাজ মানুষেরা ঝুঁকে পড়ছেন এ প্রতারণা ব্যবসার সাথে। বর্তমানে লোহাগড়া পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিকের ব্যবসা।

সরেজমিন অনুসন্ধান ও ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌর শহরসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা এবং একমাত্র সরকারি হাসপাতালের আশ পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক, আল্ট্রাসনো, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসা ও সেবার নামে এ সব প্রতিষ্ঠানে চলছে রীতিমত প্রতারণা। রোগী সেবার নামে এ সব প্রতিষ্ঠানে চলছে ‘অর্থ বাণিজ্য’। এ সব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার বিষয়টি এখন এলাকায় ‘ওপেন সিক্রেট’।

অধিকাংশ ক্লিনিক, আল্ট্রাসনো, ডায়াগনষ্টিক ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে নেই কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক। অথচ ৪/৫ জন চিকিৎকের নাম সাইনবোর্ডে লিখে আকর্ষনীয় করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি নন্দন জায়গায়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ৩/৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম সাইন বোর্ডে লিখে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যবসা। অধিকাংশ আল্ট্রাসনো, ডায়াগনষ্টিক, ক্লিনিক ও প্যাথলজি মালিক রোগী জোগাড়ের জন্য উদ্যেশ্যমুলক ভাবে কিছু ডাক্তারের নাম ঝুলিয়ে রাখেন, আদৌ ডাক্তার ওই ক্লিনিকে আসেন না বা নিজেও জানেন না যে, তার নাম ওই সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে। এমনও দেখা গেছে, একজন ডাক্তারের নাম প্রায়ই ক্লিনিকের সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে। বেশির ভাগ সময় ‘আনাড়ি ডাক্তার’ দিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা। এমনও অভিযোগ রয়েছে, কখনো ডাক্তারকে মোবাইল ফোনে না পেয়ে ক্লিনিক মালিক নিজেই হয়ে যান ‘সিজারিয়ান’ অথবা ‘এনেসস্থেশিয়া’র ডাক্তার। এ সব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা বিভিন্ন রোগের কথা বলে রোগিকে কৌশলে ভর্তি করাতে পারলে তো আর কথা নেই, বিভিন্ন মরণ ব্যাধির কথা বলে ওই রোগীকে কার্যতঃ জিম্মি করে চলে নীরব চাঁদাবাজি। শুধু তাই নয়, মালিক ও সংশ্লিষ্ঠ কতিপয় ডাক্তার প্রত্যন্ত এলাকায় ‘সোর্স’ নিয়োগ করে কমিশনের মাধ্যমে রোগিদের চিকিৎসার জন্য এ সব প্রতিষ্ঠানের নিয়ে আসেন।

ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে, ‘সিজার’ বা ‘এ্যাপেনডিস’র অসংখ্য রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে ভয়ানক রোগের কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। সরকারি হাসপাতালের কতিপয় অসাধু ডাক্তার রয়েছেন, যারা হাসপাতাল চেম্বারে বসতেই নারাজ। সকাল ৮টায় হাসপাতালের চেম্বারে বসে রোগী দেখার কথা থাকলেও ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কোন ডাক্তারের দেখা মেলে না। সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার না থাকলেও ৩ টাকার টিকিট কিনে বিনা মুল্যের সেবা পাওয়ার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে রোগীদের।

সরকারি হাসপাতালে প্রায় সকল টেষ্টের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও হাসপাতালের ডাক্তাররা আল্ট্রাসনো ও প্যাথলজিক্যাল মালিকদের সাথে আঁতাত করে বেশির ভাগ রোগী পাঠিয়ে দেন সুর্নিদিষ্ট ক্লিনিকে, যেখানে রয়েছে ডাক্তারের নির্দিষ্ট ৪০% কমিশন। ডাক্তারদের কমিশনের বিষয়টি ‘এখন ওপেন সিক্রেট’।

অভিযোগ রয়েছে, মাস শেষে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে ম্যানেজ করে প্রায় ৬/৭ বছর যাবৎ লোহাগড়ার পিয়াস, মেহেদী, কান্তি, মডেল, লোহাগড়া, সেবা, আল্লারদান, উপশম, মিজানুর নার্সিং হোম ও সিটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট থেকে শুরু করে সকল প্রকার টেষ্টের মনগড়া রিপোর্ট প্রদান করে রোগীদের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন সনজিৎ কুমার সাহা (ভারপ্রাপ্ত) জানান, অভিযোগ পেলে এ সব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(আরএম/এস/জানুয়ারি ০৩,২০১৫)