ইঁদুরছানার জ্বর

ইঁদুরছানার জ্বর। খুব গলা ব্যথা। তাই মা ইঁদুরের মন খুব খারাপ। ইঁদুরছানাটা কিছু খেতে পারছে না। ছোট্ট গলাটা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। মা ইঁদুর কী করবে, কিছুই বুঝতে না পেরে গেল পাশের বাড়ির ধেড়ে ইঁদুরের কাছে।

‘ধেড়ে ভাইয়া, ধেড়ে ভাইয়া, বাড়ি আছ?’

থপ থপ করে পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ধেড়ে ইঁদুরটা। চোখ-মুখে মহাবিরক্তি নিয়ে বলল- আঃ, কী হয়েছে নেংটি ইঁদুর? এ দুপুরবেলা ভাত ঘুমটা ভাঙালে কেন? কী হয়েছে জলদি বলো।

নেংটি ইঁদুর বলল- ধেড়ে ভাইয়া, আমার ছানার খুব গলা ব্যথা। কিছুই খেতে পারছে না বাছা আমার। কী করব বলে দাও। বাছাটার গলা ফুলে ঢোল হয়ে আছে।

ধেড়ে বলল- ও, গলা ফুলে গেছে? তাহলে হিমশীতল ঠাণ্ডা পানির মধ্যে ওকে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখো। গলা ফোলা ঠিক হয়ে যাবে- বলেই হাই তুলতে তুলতে ঘরে ঢুকে গেল ধেড়ে ইঁদুরটা।

‘তোমার ঘুম ভাঙানোর জন্য আমি দুঃখিত ধেড়ে ভাইয়া’- বলেই নেংটি ইঁদুর ছুটল বাড়ির পথে।

বাড়ি গিয়ে ছানাকে হিমশীতল ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখল কিছুক্ষণ। ইঁদুরছানা তো পানিতে নামতেই চাচ্ছিল না। তার ওপর জ্বর! শীতে সে ঠকঠক করে কাঁপা শুরু করল। মিহিস্বরে মা-মা করে ডেকে বলল- আমার খুব শীত করছে। এ পানি থেকে তুলে নাও। আমি মরে যাচ্ছি মা...

নেংটি ইঁদুর বলল- বালাই ষাট, তুই মরবি কেন বাছা আমার! তোর শত্তুর মরুক। একটু কষ্ট করে থাক। ধেড়ে ইঁদুর ভাইয়া বলেছে, তুই ঠিক হয়ে যাবি।

মা-ছেলের কথা শুনে বরইগাছ থেকে ঝুপ করে নামল এ গেছো ইঁদুর।

‘কী হয়েছে নেংটি ইঁদুর? ভাগ্নে ওমন করে কাঁপছে কেন?’

‘আর বলো না গেছো ভাইয়া, বাছার খুব জ্বর। তাই গিয়েছিলাম ধেড়ে ভাইয়ার কাছে। সে বলল হিমশীতল পানিতে ডুবিয়ে রাখলে নাকি বাছার জ্বর ভালো হবে।’

গেছো ইঁদুর বলল, ‘জ্বর হলে হিমশীতল পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়, এ কথা তো আগে শুনিনি। তুমি আগে ভাগ্নেকে পানি থেকে তুলে ভালো করে গা মুছিয়ে সরিষার তেল হালকা গরম করে মাখিয়ে দাও। আর গরম পানি করে আদা দিয়ে একটু চা বানিয়ে খাওয়াও। ওর গলা ব্যথা থাকলে ঠিক হয়ে যাবে আর একটু গার্গলও করতে বলো।’

‘কী বলো গেছো ভাইয়া, ধেড়ে ভাইয়া তো এসবের কথা কিছুই বলেনি! সেই তো ইঁদুর রাজ্যের বড় ডাক্তার!’

‘যা বললাম, আগে তাই করো। পরে ধেড়ে ইঁদুর ভাইয়ার কথা ভাবা যাবে’- বলেই গেছো গাছে উঠে গেল।

নেংটি ইঁদুর গেছোর কথামতো ছানার যত্ন নিল। বিকাল না হতেই ইঁদুরছানা বেশ আরাম বোধ করল। জ্বর এখনো আছে। তবে গলা ব্যথা কমেছে। নেংটি ইঁদুর গেছোর ওপর খুব খুশি হলো। আর ধেড়েটার ওপর রাগে গরগর করতে থাকল। মনে মনে বলল, ধেড়ের একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। তাই সে গেল ইঁদুর রাজার কাছে।

‘ইঁদুর রাজা বাড়ি আছ’? ডাকল নেংটি ইঁদুর। ডাক শুনে সিপাহি বলল অপেক্ষা করতে। নেংটি ইঁদুর বসে পেপার পড়তে লাগল। এমন সময় রাজদরবারে উপস্থিত হলো ইঁদুর রাজা। তাকে কুর্নিশ করে নেংটি ইঁদুর ধেড়ের কথা বলল। সঙ্গে গেছোর উপকার করার কথাও বলল।

ইঁদুর রাজা বলল, কী বিপদ! কী বিপদ! ডাক্তার হয়ে রোগী মারার পরামর্শ! সিপাহি এখনই ধেড়ে আর গেছোকে ডেকে আনো। ‘আজ্ঞে মশায়’ বলে সিপাহি ইঁদুর ছুটল দুটিকে ধরে আনতে। কিছুক্ষণ পর ধেড়ে আর গেছোকে নিয়ে এলো সিপাহি। ধেড়ে বলল গলা ফুলে গিয়েছিল তো, তাই বলেছিলাম ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে। জ্বর ছিল- এ কথা শুনিনি রাজামশায়। ইঁদুর রাজা কোনো কথা শুনলেন না। রাজ্যের ইঁদুরের ডাক্তারি দায়িত্ব দিয়ে দিলেন গেছো ইঁদুরের ওপর।