স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে আদালতের দেয়া রায় মেনে নিয়েছেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার এ কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায় মেনে নিয়েছি। কিন্তু যিনি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি এ রায় মেনে নেবেন কি না সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার।

খন্দকার মাহবুব বলেন, আমরা আদালতে বলেছিলাম, যেহেতু প্রধান আসামিদের (পাকিস্থানি আর্মি) মাফ করে দেয়া হয়েছে। তাই সহযোগী আসামিকে (নিজামী) চরম দণ্ড দেয়া যায় না। এছাড়া নিজামী বয়স্ক ভদ্রলোক, ট্রাইব্যুনালের রায়ে তাকে ইসলামিক স্কলার্স হিসেবে উল্লেখ করেছে তাই তাকে সাজা দেয়া হলেও যেন নমনীয় সাজা দেয়া হয় সেই প্রত্যাশা করেছিলাম।

রিভিউয়ের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না রিভিউ আবেদন করা হবে কিনা। আপিলের রায় পর্যালোচনা করে নিজামী সাহেব যদি মনে করেন রিভিউ আবেদন করবেন তাহলে রিভিউ করা হবে।

তিনি বলেন,‘আবার নিজামী সাহেব যদি মনে করেন রিভিউ করে অন্যরা কোন ফল পায়নি সেক্ষেত্রে তিনি রিভিউ নাও করতে পারেন।’ট্রাইব্যুনালের সেফহোমে সাক্ষীদেরকে রেখে কিভাবে সাক্ষ্য দিতে হবে তা শেখানো হতো। সেই সাক্ষ্যর ভিত্তিতে নিজামীকে ফাঁসি দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে দেয়া সাক্ষ্য সঠিক ছিল না ভবিষ্যতই তা বলে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিজামীসহ অন্য যাদের এখন বিচার হচ্ছে, তাদেরকে অপরাধের সহযোগী হিসেবেও দাবি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার দাবি, মূল যুদ্ধাপরাধী ছিলেন পাকিস্তানের ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তা। মূল অপরাধীদের বাদ দিয়ে সহযোগীদের বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো।

নিজামীর প্রধান আইনজীবী বলেন, ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে হয়তো কিছু লোক পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাস করতেন। এর মানে এই নয় যে, সে কারণে সেসব মানুষ হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণের মতো অপরাধ করেছেন। ট্রাইব্যুনালে বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশও করেন খন্দকার মাহবুব।

তিনি দাবি করেন, সেফহোমে রেখে দিনের পর দিন এসব সাক্ষীদের শিখিয়ে-পড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়েছে। সাক্ষীরা শেখানো সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাতে ভবিষ্যতে সাক্ষীদের নিয়ে প্রশ্ন দেখা দতে পারে।

এদিকে, নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

এর আগে বুধবার সকাল ৯টার পরে ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রেখে নিজামীর আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৬, ২০১৬)