আশ্রয়

তরল জল যেভাবে ফ্রিজিং হয়-
জমতে জমতে জমাটবরফ। সেভাবে
নিতান্তই জমে যাবার মতো করে,
ধীরে ধীরে ভারি হয়েছে তোমার
ব্যক্তিগত দুঃখের সাতকাহন।
আকাশকে বললে- নিবে কিছু?
আকাশ মেঘের আড়ালে মুখ লুকালো।

চেনা আকাশের অচেনা প্রপঞ্চনা
বুকে ধারণ করে- মগ্নমনে লগ্নভুলে,
উদাস বিকেলে হেঁটে হেঁটে হাজির হলে,
অভিমানী এক নদীর কাছে। বললে-
হে শান্ত নদী নিবে কিছু অশান্ত দুঃখ আমার?
নদীর শুকিয়ে যাওয়া জলও কেমন
অশ্রুর মতো ছলছল করে উঠলো হঠাৎ।

জলদায়ী নদীর একান্ত বিষাদ সাথে নিয়ে
ভাবলে এবার সমুদ্রে যাই তবে-
বিশাল সমুদ্রের ফেনিল জলে
ফেলে আসি আমার দুঃখের ভার,
কোন এক মরা সন্ধ্যায়,
লোনা জলের প্রাচুর্য জিভে ছুঁয়ে
তুমি আবিস্কার করলে- বারোয়ারী মানুষের
দুঃখ আর চোখের জলে সমুদ্র ভারাক্রান্ত।

ভাবতে ভাবতে অসীম মহাশূন্যে তাকালে,
সহসা কাঁধে কারও হাতের স্পর্শ-
কেউ একজন বললো- নাও কবিতা পড়ো।

তুমি নাম না জানা সেই কবির কাব্য
পড়তে পড়তে ভাবলে- নাহ! আমার
সমস্ত দুঃখ এই কবিকেই দিতে হবে।
ততক্ষণে প্রতিটি শব্দ তোমাকে ধারণা
দিয়েছে- জগতের সমস্ত দুঃখ
বুকে ধারণ করেই একজন কবির জন্ম হয়।

হঠাৎ উত্তুরে বাতাসটা দক্ষিণে ধাবমান-
একটা সাদা পৃষ্ঠা উল্টে যেতেই
সমস্ত অক্ষর কালো হতে হতে
এক একটা মার্বেল চোখ। যেন-
তোমার সমস্ত দুঃখবোধ মিলেমিশে
একটা কবিতা হয়ে গেছে।

অনির্ণীত

অন্ধ লোকটা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে
একটা স্বচ্ছ আয়না হাতে নিয়ে।
বিকট শব্দে বোমা ফাটার পরে, বধির
লোকটা অধীর আগ্রহ নিয়ে হাসছে।

যে লোকটা কথা বলতে পারে না,
তার হাতেই এখন সমস্ত ভাষণযন্ত্র।
'সুস্থ বোধ ছাড়া পাগল হওয়া যায়না'
এই তথ্য প্রতিটি পাগলের জামাহীন বুকপকেটে।

পা ছাড়া মানুষগুলো এখনো উঁচু দালানে থাকে-
যাদের এখনো দুই'পা সম্বল- তারাই সময়ের ছবি আঁকে।

অস্তকালীন

হোঁচট খাবার আগে ঠিকঠাক দাঁড়িয়েই যায়
পা। থমকে দাঁড়ায় চলন্ত গতিধারা!
শুয়ে থাকা পথ অবাক বিস্ময়ে ভাবে-
পথিকের জন্মকালীন গল্প তার বুকেই লেখা।
তারপরও মৃত মানুষের জন্মদিনে
ধৃত কিছু ধূর্ত মানুষ, অযথা বেলুন ফুটায়।

কুয়াশা ও ধোঁয়ার পার্থক্য নির্ণয় করতে গিয়ে
আমরা দিব্যি ভুলে যাই জলীয়বাষ্পের জলজ
ঘ্রাণ। গান যখন কলতান, কথা যবে বক্তৃতা,
অক্ষর যখন সাক্ষরহীন, কাব্য যখন নাব্যতা ভুলেছে,
ভবিতব্যের পায়ে স্থিতির কুঠার ঠুকে, আমরা
তখনো কাটতে থাকি সময়ের রক্তাক্ত শরীর।
চারপাশে কালো হাত, দৃশ্যপটটা ফাঁকা, একাকীত্বের ভিড়।

দিনের শেষে আক্লেশে জড়িয়ে ধরে বিদায়ী সূর্য-
নিভে আসে ধীরে ধীরে আলোকিত জীবনের আরাধ্য প্রাচুর্য।

কবির মৃত্যু

আমার অতি প্রিয় এক কবির কবিতায়
হাজার হাজার লাইক, কোটি কোটি মন্তব্য।
কিলবিল করে চলছে পাঠক- পায়ে পায়।
কবির কাব্য নিয়ে সবার- অসীমে গন্তব্য।

কবি যেন রাণী মৌমাছি- অজস্র ভক্তকূল-
কবির প্রোফাইল ছবিতে আছে ৮০টা ফুল।

অধীর আগ্রহে প্রতিদিন আমি মন্তব্য লিখি-
নিশ্চিত জানি কবির এসবে নেই কোন মন।
কবি মগ্ন শব্দের দ্যোতনায়, লগ্ন আঁকাআঁকি-
ভার্চুয়াল জগত তার অপ্রকাশ্য বিনোদন।

১০০ বছরের ঘুম ভেঙ্গে দেখি এক সকালে-
আমার মন্তব্যে লাইক দিয়ে কবি মরেছে অকালে।