যশোর প্রতিনিধি : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদসহ কুষ্টিয়া জেলা জাসদের ৫ নেতা হত্যা মামলার তিন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের লক্ষে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে এ তিন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে কারাগার সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফাঁসির আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কুর্শা গ্রামের উম্মত মণ্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেন, একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঝন্টু এবং একই উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন ওরফে হাবিব।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, তিন আসামির ফাঁসি কার্যকরের লক্ষে বুধবার (০৬ জানুয়ারি) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জল্লাদ তানভীর হাসান রাজু ও হযরত আলীকে যশোরে আনা হয়েছে। এছাড়াও ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

সূত্রটি আরও জানায়, ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান বর্তমানে যশোর সার্কিট হাউসে অবস্থান করছেন। এছাড়াও ফাঁসি কার্যকরের সময় যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, সিভিল সার্জন শাহাদাৎ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল হাসানসহ পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের তৎকালীন সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডল।

এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়ার জেলা জজ আদালত ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। তবে, ওই সময় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া ৬ আসামি পলাতক ছিলেন। ২০০৮ সালে এক ফাঁসির আসামি ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ১২ জনকে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ খালাস দেন। এতে খালাস পাওয়া সব আসামির বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

আর খালাসের আবেদন করেন মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি রাশেদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও ইলিয়াস হোসেন। হাইকোর্টের আপিল বিভাগ তাদের ফাঁসি বহাল রাখেন। পরে, রিভিউ আবেদন করলেও সেখানেও তাদের ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকে। এদিকে, কারাগারে মারা যান ইলিয়াস।

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া রাশেদুল ও আনোয়ার। তবে, তা নাকচ করে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি। ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফাঁসির রায় কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এ মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচ আসামি হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পচাভিটা গ্রামের মান্নান মোল্লা, মিরপুর উপজেলার কুর্শা মেহেরনগরের রমজান আলীর ছেলে জাহান আলী, বালিয়াশিষা গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নায়েব মন্ডলের ছেলে রওশন ও কিশোরীনগর গ্রামের মোজাহার উদ্দিনের ছেলে বাকের উদ্দিন।

(ওএস/পি/জানুয়ারি ০৭, ২০১৬)