মাহবুব আরিফ

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র সংগীতাঙ্গন ভাংচুরের পাশাপাশি সুর সম্রাটের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রও পুড়িয়ে দেয়াটা আমাদের উপমহাদেশের সংগীতের এক অমূল্য সম্পদ ও ঐতিহ্যকে আমাদের দেশের ইতিহাস থেকে হারিয়ে ফেলা, এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে না পারলে জাতির কাছে আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা থকে মুক্তি পাবো কি ?

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ যিনি বাবা আলাউদ্দিন খান হিসেবেও বিশেষ ভাবে পরিচিত আমাদের উপমহাদেশের ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন গর্ব | কঠোর পরিশ্রম ও সঙ্গীতের উপর নিরলস পরিশ্রমের কারণে তিনি আজ আমাদের মাঝে সংগীতের একজন কিংবদন্তী | তার জাঁকজমকপূর্ণ গৌরবময় শাস্ত্রীয় সংগীতের উপর যে অধ্যবসায় তা আমাদের উপমহাদেশের সংগীত জগতকে করেছে সমৃদ্ধময়,

১৮৬২ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সম্ভ্রান্ত সংগীত পরিবারে তাঁর জন্ম | খুবই অল্প বয়সে তিনি সংগীত সাধনায় মনোনিবেশ করেছিলেন, তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের মূল ধারা ছিল আমাদের ক্লাসিক্যাল সংগীত জগতে উপমহাদেশের বাদ্যযন্ত্র ও তার সঠিক কর্ড ও প্রসারের গবেষণা | শ্রদ্ধা আর সম্মান জানাতে তিনি ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, সারাটি জীবন সমাজে তার সংগীতের জ্ঞানকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে তার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন, পরীক্ষা এবং শেখার এই প্রক্রিয়ায় তিনি বিভিন্ন ভারতীয় যন্ত্র, অর্কেস্ট্রা রচনা, ইংরেজি, স্বরলিপি এবং বিরল কম্পোজিশনের কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদেরকে করেছেন সমৃদ্ধ | তাঁর কর্ম ও রেখে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রের সম্ভার আমাদের সংগীতের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের |

একজন সত্যিকারের সংগীত সাধক হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, যেতে হয়েছে অনেক শিক্ষা গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করার কঠিন পরীক্ষা, রামপুরে একজন সুপরিচিত ক্লাসিক্যাল সংগীত সাধক ওস্তাদ ওয়াজির খানের একজন সুযোগ্য ছাত্র হিসাবেই তাঁর সঙ্গীত শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়, ওস্তাদ ওয়াজির খানের আশীর্বাদ ও প্রচেষ্টায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ হয়ে উঠেন উপমহাদেশের সর্ব শ্রেষ্ঠ সরোদ বাদক । সেই সুবাদে তিনি, ভারতের মধ্যপ্রদেশে মাইহার রাজ্যে জীবনের অধিকাংশ সময়ে সুরের সাধনায় মগ্ন ছিলেন | মাঝে মাঝে কোলকাতাতে তার যাওয়া আসা থাকলেও জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সত্য উদয় শঙ্করের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যার সাথে তিনি সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের উপর অনেক বড় বড় কাজ করেছেন, তার সংগ্রহের মাঝে পারি তিন হাজার ধ্রুপদী ও পারি বারোশত কম্পোজিশন ছিল অন্যতম, এছাড়া তিনি বাদ্যযন্ত্র জ্ঞানে ছিলেন এক সুবিশাল কোষাগার, তিনি যন্ত্রসংগীত ছাড়াও অগণিত কম্পোজিশনের মাস্টার, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সিস্টেমের রাগ-রাগিণীর বিস্ময়কর জ্ঞান আজও আমাদের উপমহাদেশে তিনি ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা, তিনি তাল ও লয়ের একজন মহান মাস্টার, Pakhawaj ও তবলা ও অন্যান্য যন্ত্রের উপর তিনি শুধুমাত্র ওস্তাদ ছিলেন না বরং এগুলোর উপর ছিল তার অগাধ দখল ও ক্ষমতা |

আমার যদি এই সব অমূল্য সম্পদের সম্ভারকে ধরে রাখতে না পারি সেটা হবে হবে একটি জাতির জনে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা | আজ ধর্মান্ধ উন্মাদের ঠিক সেই কাজটি গর্বের সাথে সম্পন্ন করছে | আমাদের সচেতনতা কি এতটাই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে যে আমার আজ আমাদের ঐতিহ্যবাহী সম্পদকে ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি ?

লেখক :সুইডেন প্রবাসী