এবাদত উদ্দিন (বাংলা প্রেস), নিউ ইয়র্ক : নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত হাডসন শহরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণের ‘বাংলা উৎসব’ গত শনিবার হাডসনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ বাংলা উৎসবে স্থানীয় সংস্কৃতিপ্রেমীরা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি শহর থেকে প্রচুর সংখ্যক দর্শক-শ্রোতার সমাগম ঘটে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।

স্থানীয় সেন্ট ম্যারি’স একাডেমির মিলনায়তনে শনিবার দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এ উৎসব। দুপুরে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হাডসন সিটির বাংলাদেশি কমান্ড কাউন্সিলম্যান আব্দুস মিয়া (মাহবুব)। এরপর পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন হাফেজ মোহাম্মদ আফজাল। সাম্প্রতিককালে নিহত স্থানীয় গুণী ব্যক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরনে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

উদ্বোধনের পর শুভেচ্ছা বক্তব্যে কাউন্সিলম্যান আব্দুস মিয়া বলেন,অত্র এলাকায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই প্রবাসের নতুন প্রজন্মকে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশ গড়ার সঠিক ইতিহাস জানাতে নিয়মিত এ ধরেনের অনুষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে। শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন করতে তাদের অংশগ্রহনে আগামী দিনে আরো বেশি করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য তিনি কমিউনিউটির নেতৃবৃন্দদের কাজে আহবান জানান।

স্থানীয় কমিউনিটি নেতা শেরশাহ মিজানের পরিচালনায় ও সুমাইয়া আনোয়ার এলিজা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রবাসী কবি লেখক শরিফুল আলম এবং মহিউদ্দিন রনি। শেরশাহ মিজান তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, হাডসনে প্রবাসীদের আনন্দ বিনোদনের কথা চিন্তা করে আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু এ ধরনের অনুষ্ঠান করার চিন্তা করি। নতুন প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশে সবগুলো জাতীয় দিবস করার পরিকল্পনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সময় ও অর্থ সংকটে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে আগামীতে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে আরো বেশি বেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার।

দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের কর্মসূচির মধ্যে ছিল কবি শরিফুল আলমের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত উল্লাহর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়। প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের তরুন মহিউদ্দিন রনি রহমত উল্লাহর কাছে জানতে চান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সেইসব দুঃসহ স্মৃতির কথা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির কথা জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেন রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন শুনেই মুক্তিযুদ্ধের যাবার অনুপ্রেরনা পাই। সেই মোতাবেক আমরা ২৫ মার্চ থেকেই যুদ্ধ শুরু করি। চট্টগ্রামের একটি অস্ত্রভান্ডার থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র নিয়ে আমরা শত্রুদের মোকাবেলা করতে শুরু করি। তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে, কোনটা রেখে কোনটা বলব। স্বল্প সময়ে এ ধরনের একটি অনুষ্টানের মাঝখানে এত কথা বলা সম্ভব নয়। কখনো সময় হলে মুক্তিযুদ্ধের নতুন কোন গল্প শোনাব। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কবি শরিফুল আলম প্রবাসে এ ধরনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারনমুলক সাক্ষাৎকার গ্রহন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই শহরে বসবাস করছি। প্রবাসে সময় সল্পতার মাঝেও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রেখেছি। এই প্রথমবারের মত কোন অনুষ্ঠানে একজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে যুদ্ধ বিষয়ক তার স্মৃতিচারন শোনার সৌভাগ্য হল। এ ধরনের অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সেমিনার বা মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারন একটি প্রসংশিত চিন্তাধারা। এ ধরনের চিন্তাধারা অব্যাহত থাকলে এদেশের বেড়ে উঠা শিশু-কিশোররা অনেক কিছুই জানতে পারবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাডসন সিটি মেয়র টিপিনি মার্টিন হ্যামিলটন, সুপার ভাইজার বিলি হিউজ, কাউন্সিল ওমেন টিপিনি গ্যারিগার, সিটি অ্যাটর্নি ক্রিস্টল হেইঞ্জ, ডেমোক্রাটিক চেয়ারম্যান মাইকেল চেমোডি, কমোন কাউন্সিল ডেস্টেপিনো, ডেমোক্রাট সেরা ষ্টারলিং, ভার্জিনিয়া মার্টিন ও টিএসএলের ডাইরেক্টর লিন্ডা মাসমেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কবিতা আবৃত্তি করেন আলবেনি প্রবাসী আবৃত্তিকার দম্পতি মিজান প্রধান ও ফারহানা পলি। শেষ পর্বে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন হারুনুর রশীদ, শরিফুল আলম, কৌশলী ইমা, তানিয়া জামান, সুমাইয়া আনোয়ার, সায়মা সাইদা, আনোয়ার কামাল, রুবি সরকার, সামারুন সোহানা, সাবিহা খাতুন, রাইম আনোয়ার, লুবনা, সুমাইয়াহ সুখ ও ভ্যালিনা রশীদ। যাদের অক্লান্ত শ্রমে এবারের অনুষ্ঠান সফল হল তারা হলেন: শেরশাহ মিজান,আব্দুল সরকার রাসেল, আমিনুল ইসলাম রিপন, হারুনুর রশীদ, মহিউদ্দিন রনি, তানিয়া, আতাউল বেগ, খলিলুর রহমান, শরিফুল আলম, আব্দুস মিয়া, কাজী শাহীন, সাঈদ খোকন, আনোয়ার কামাল, জাবেদ ইকবাল রনিসহ আরো অনেকে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২০, ২০১৬)