তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : তাড়াশে সরিষার ক্ষেতে ব্যাপক হারে লিটোরা পোকার আক্রমনে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আধাপাকা সরিষার ক্ষেত দিনের পর দিন পোকায় খেয়ে ফেললেও কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ পায়নি কৃষকরা। এমনকি সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কৃষককে পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় বা প্রতিকারের কোন পরামর্শ প্রদান করেনি। ফলে শেষ সময়ে সরিষা ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা।

সরেজমিনে মাঠ ঘুরে ও কৃষকের সাথে কথা বলে জানাযায়, তাড়াশ উপজেলায় চলতি বছরে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় বিলের নিন্মাঞ্চলেও কৃষক সরিষা ও ভুট্টার আবাদ করছেন।

সরিষা বপন ও ভুট্টা রোপন করার সময় কাটুই (স্থানীয় ভাষায়) পোকার আক্রমন দেখা দিলেও কৃষক নিজের বাজার থেকে কীটনাশক ক্রয় করে জমিতে দিয়ে কাটুই পোকার আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা করে। সরিষার ফুল ঝড়া শেষ হলে এক জাতীয় কালো ও মেটে রংঙের কাটুই পোকা (যা কৃষি অফিসের ভাষায় লিটোরা নামে পরিচিত) সরিষার ক্ষেতে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ লিটোরা পোকা (কাটুই) এক রাতেই কয়েক বিঘা জমির ফসল খেয়ে ফেলছে। সরিষার ক্ষেত কালো পোকায় ছেয়ে গেছে। যে সব এলাকায় আগাম জাতের সরিষার আবাদ হয়েছিল সেখানে পোকার আক্রমন থেকে কৃষক রক্ষা পেয়েছে। তাদের প্রতিবিঘা জমিতে ৫মন থেকে ৬মন হারে সরিষার ফলন হয়েছে। নাবীজাতের সরিষা আরও ভাল হয়েছে। কৃষকরা জানান, প্রতিবিঘা (৩৩শতক) জমিতে ৬/৭মন করে সরিষা হত। কিন্তু পোকার আক্রমনে এখন বিঘা প্রতি ১মন থেকে ২মন সরিষা পাওয়াই কঠিন হবে।

ধাপতেতুলিয়া গ্রামের আমিন মন্ডল, আবুল হোসেন, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, সায়ফত আলী জানান, কাটুই পোকার আক্রমনে আমরা পাগল হয়েছি। আর ক’ দিন পরেই সরিষা ঘরে তুলতে পারব। সকালে যে জমিতে পোকা নাই বিকেলে সে জমিতে পোকার আমদানী। কৃষকরা জানান, এই ব্লকের কোন বিএসএস বা কৃষি কর্মকর্তা কখন মাঠে আসে না এবং কৃষকের কোন খোজখবর নেয় না। তারা আমাদের পরামর্শ দিলে হয়ত পোকার আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা করা যেত। যাদের দেখাই পাওয়া যায়না তাদের নিকট থেকে কি পরামর্শ পাব।

ভেটয়া গ্রামের কৃষক রায়হান আলী ছোলায়মান আলীসহ অনেকেই জানান, পোকা যে ভাবে আক্রমন করছে তাতে সরিষা ঘরে তোলাই কঠিন। সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় ক্ষতি বেশী হচ্ছে। বাজার থেকে যে সব কীটনাশক পাওয়া যায় তা দিয়ে পোকা মরে না। সরিষার পোকা বাড়িতে আসা শুরু করেছে। যা দেখলে মেয়ে মানুষ আর সরিষা কাজ করতে চায় না। কৃষক আরও জানান, এই ব্লকে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন তারা কখনও মাঠে আসেন না। তিনি গুরুদাসপুর সদরে থাকেন এবং মাসে ২/১বার এসে বাজারে বসে চা খেয়েই চলে যান।

সগুনা ইউনিয়নের ধাপতেতুলিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ সংবাদটি পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করে বলেন আমি আপনার সাথে দেখা করছি। তিনি মাঠে কম আসেন সে ব্যপারে স্বীকার করে বলেন বন্যার সময় কম যাওয়া হয়েছে। সরিষা ও ভুট্টার সময়ও তো আপনি কৃষককের কোন খোজখবর নেয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলেন যাওয়া হয়েছে কম। তিনি আরও জানান, আমি সেদিন ধাপতেতুলিয়া বাজারে গিয়ে জামাল ভাইয়ের সাথে দেখা করে এসেছি। আপনাকে কৃষক মাঠে পায় না এবং আপনার নিকট থেকে কোন পরামর্শও পায় না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি নাজেহাল হয়ে পরেন এবং কিছু সময় নিশ্চুপ হয়ে যান।

কুন্দইল ব্লকের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্লক সুপারভাইজার বা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মাহফুজা বেগম। তিনিও স্বামীর চেয়ে বেশী ফাকি দিয়ে থাকেন। কখন তিনি মাঠে আসছেন কিনা তা কোন কৃষক বলতে পারে না। মাঝে মধ্যে কুন্দইল বাজারে বসে দু’জনে কতিপয় লোকের সাথে বাজারে বসেই কথা বলে চলে যান। তারা স্বামী স্ত্রী দু’ জনই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে তাড়াশে চাকুরী করেন এবং দু’জনই গুরুদাসপুর উপজেলা সদরে বসবাস করে থাকেন।

তাড়াশ কৃষি অফিসের জনৈক কর্মকর্তা জানান, তিনি মিটিং থাকলে অফিসে আসেন আর মিটিং না থাকলে তাকে পাওয়া যায় না। তিনি প্রতিদিন ঠিকমত অফিস করেন না। না প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানান, তিনি ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাকে কিছু বলার মত সাহস কারো নেই। যে বলবে তার গদি নড়ে যাবে। তাই তাকে কেউ কিছু বলেন না।

এলাকার কৃষকরা জানান, যে ব্লক সুপারভাইজারকে দিয়ে কৃষকের উপকার হবে না তাকে সেই ব্লকে রাখার প্রয়োজন নেই। কৃষক চায় অফিসের লোক দারা সঠিক পরামর্শ পাওয়া। যাতে কৃষকের উপকারে আসে।



(এমএমএইচ/এস/জানুয়ারি ২১,২০১৬)