পরাজয়ের ইতিবৃত্ত

টসের কয়েনও জানে শূন্য থেকে পতনের মধ্য দিয়েই কোনটা তার জয় কোনটা পরাজয়। শৈশবের লাটিম খেলার দিনগুলো হয়তো ফিরে আসবে না কিন্তু স্মৃতিতে সেই ঘূর্ণায়ন। ওই যে সকাল কিংবা বিকালবেলা নদীতীরে বালুমাঠে দায়রাবাদিয়া খেলায় কান্নি কাটা; প্রথম কোট থেকে শেষের কোটে আবার শেষের কোট থেকে প্রথম কোট পার হয়ে জয়ী হওয়ার আনন্দ; সেইদিন ফিরবে না। ডাংগুলির কথা কি আর ভোলা যায়! তিন বাড়িতে গুটির দূরত্ব যে পর্যন্ত সেখান থেকে একে একে গুণে আসা সংখ্যাতত্ত্বের গণনাক্রম। এখনো মনের মধ্যে কাবাডি খেলার দম হুংকার দেয়। টেনিস বল দিয়ে সাতচারা খেলার দিন কিংবা চোখ পলান্তি আহা শৈশব আবার তুমি কি ফিরে আসবে! নাকি তুমিও জেনে গেছো পরাজয়ের ইতিবৃত্ত।


পুষ্পকথা

সবুজ-স্বপ্নগুলো পুষ্পকথা হয়ে ছড়িয়ে আছে মনের নিসর্গ উঠোনে
অসময়ে স্বপ্নের ইমারত গড়া শুধুই স্বার্থের ভূগোলে ঘুরে বেড়ানো
শীতের অসহায় দুপুরে পাতার নিজস্ব ঘ্রাণ বিলীন হয়ে যাচ্ছে
সত্য সম্ভাষণ; নিঃশ^াসের বায়ু বেয়ে উড়ে গেছে দূর অন্ধকার সম্ভারে
শীতের দৃশ্যকল্প নিয়ে জেগে আছে কেবল হৃদয়ের বিরোধি জোছনা

কুয়াশার কোমল স্পর্শ হতে একফোঁটা শুভ্রশীতল জলের স্বাদ
পৌষ সংক্রান্তিতে এনে দিতে পারে যাপিত জীবনে বর্ণিল আয়োজন
হৃদয়ের বাগান বাড়ি; পুষ্পকথায় ভরে ওঠুক এবারের শীতানন্দে।



কুয়াশাব্যঞ্জনা

ক্রমাগত কুয়াশাবরফের শীতল আস্তরণ খসে খসে পড়ছে গাঙের মাঝে-
আলু ক্ষেতে, সরিষা ক্ষেতে, খেসারি-কলাই আর দুর্বাঘাসের সবুজ সমারোহে
তারই মধ্যে ফুটে আছে নানা রঙের ছোট্ট ছোট্ট ফুল, বসে আছে দূরন্ত ঘাসফড়িং
ছোট্ট খালের মতো চিকন একটা নদী দেখতে দেখতে ইতিহাস হলো ধলেশ^রী নামে।
স্বাপ্নিক অনুভূতিগুলো ফেলে আসা দূরবর্তী দৃশ্যসম্ভার দেখে ফ্ল্যাসব্যাকে
ঝুম-ঝুম শব্দের জন্যে আমরাও গেয়ে ওঠেছিলাম প্রার্থনার বৃষ্টিসঙ্গীত
আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, আল্লাহ মেঘ দে... রে...
এখন শীতের নির্জন দুপুরের মতো রুগ্ন লাগছে রাষ্ট্রীয় পরিবেশ;
রুগ্ন হয়ে গেছো তুমিও প্রিয়তম শহর
এই কুয়াশাব্যঞ্জনা নিয়ে অদৃশ্য অবহেলা কেনো এঁকে যাচ্ছো যাপিত জীবনে।

শীতকালীন স্মৃতিগন্ধ

মনে পড়ে, কুয়াশাচ্ছন্ন সেই প্রথম সকালবেলার কথা; সাদা-সাদা অন্ধকারের ভেতর দিয়ে
গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টির মাঝে কতো অন্ধকার পেরিয়ে হেঁটে গেছি ধলেশ^রীর তীর ঘেঁসা বালুময়পথ।
নদীর বুক থেকে যখনই কুয়াশার ধুয়া ওঠেছে তখনই শীতের প্রকোপ বেড়েছে অনুমান হয়ে
যেতো; নদীতে ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো শীতরাতের অন্ধকার পেরিয়ে গেলেই দেখে নিতাম
প্রথম কমলা রঙের কোমল সূর্যদয়। রাতের অন্ধকারে জ¦ালানো কুপির-আলো নিভু হয়ে যেতো।
ভেসে আসতো মসজিদ হতে মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি; তার-সাথেই ডেকে ওঠতো ভোরডাকা
পাখির কলরবমাখা কূজন। মায়াবী শীতল হাওয়া এসে লাগতো গায়ে। গাছেদের সবুজপাতাগুলো
শিশিরের জল নিয়ে খেলে যেতো হাওয়ার দুলুনি। জেলেদের ঘুমভাঙলেই জেগে ওঠতো রুপালী মাছ।
এখন ফেলে আসা ভোর অনুভূতির উপকথা সাজায়; আর নদীর বুকে শুয়ে থাকে নিস্তরঙ্গ জলের শূন্যতা
হায়-রে ধলেশ্বরী! কাছে থেকেও দেখা হয় না; তবুও জাগ্রত হৃদয়ে জেগে থাকে শীতকালীন স্মৃতিগন্ধ।






(এসএকে/এস/জানুয়ারি২১,২০১৬)