স্টাফ রির্পোটার : পথশিশুরা পথের ময়লা কুড়িয়ে খাওয়া কাক নয়, তারা নিজের ঘর বুনতে পারা বাবুই। তারাও মানুষ। ভালোভাবে বেঁচে থাকার, একটু আদর, ভালোবাসা, সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার পথশিশুদের আছে। তাই তাদেরকে অশিক্ষা, অপরাধ থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব সমাজেরই।

শনিবার সকালে বাংলা একাডেমিতে পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের জন্য ব্যাংকিং কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের সঞ্চয়মুখী ও আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো ৩০০ পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুর ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দশটি ব্যাংক এসব ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। অনুষ্ঠানে এ অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্য থেকে ১০ পথশিশুর হিসাব খোলার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে আতিউর রহমান বলেন, ‘পথশিশুরা সারাদিন যা আয় করে তার অর্ধেক বা পুরোটাই অপচয় করে বন্ধুদের আড্ডায়। তাদের কোনো সঞ্চয় নেই। সঞ্চয় থাকবে কী করে? তারা তো ব্যাংকই চেনে না। এ উদ্যোগ তাদেরকে শুধু ব্যাংকই চেনাবে না, ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত করবে। তাদেরকে সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। ব্যাংক হিসাবধারী পথশিশুরা তাদের ক্ষুদ্র আয়ের কিছুটা হলেও সঞ্চয় করতে পারবে। হয়তো এই সঞ্চয়ই তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার পথ তৈরি করে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বরাবরই সমাজ নামক পিরামিডের নিচের অংশের উন্নয়নে বিশ্বাসী। সমাজের বঞ্চিত, অবহেলিত ও সাধারণ মানুষের উন্নয়ন না হলে অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়। এ বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি আর্থিক খাতকে আরও মানবিক ও দরিদ্রবান্ধব করতে চেয়েছি।’
যেসব ব্যাংক পথশিশুদের হিসাব খোলায় এগিয়ে এসেছে সেগুলো হলো: রূপালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এনসিসি ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এসব ব্যাংক আটটি এনজিওর সহায়তায় পথশিশুদের অ্যাকাউন্ট খুলেছে।
এর আগে গত ৯ মার্চ ১০ টাকার নামমাত্র জামানতে পথশিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনজিওদের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের জন্য হিসাব খোলার উদ্যোগ নেয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং ও সিএসআর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকেল ম্যাকগ্রাথসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এএস/মে ৩১, ২০১৪)