গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)প্রতিনিধি :ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) শহীদ হারুন দিবস। ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১দফা আন্দোলনের সময় ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট এর ছাত্র মতিউর রহমান পুলিশের গুলিতে শহীদ হলে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনের নতুন মাত্রার যোগ হয়।

আর এই বিক্ষোভের জের ধরেই ১৯৬৯ সালের ২৭ জানুয়ারি গৌরীপুর শহরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গৌরীপুর কলেজ থেকে ছাত্ররা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের মধ্যবাজারে আসা মাত্রই তৎকালীন মহকুমার প্রশাসক এম, এ সামাদের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালায়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মেধাবী ছাত্র আজিজুল হক হারুন। সে দিন ছিল সোমবার সকাল ১১ টা।

দিবসটি পালন উপলক্ষে গৌরীপুরে শহীদ হারুন স্মৃতি সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড কাউন্সিল, চাঁদের হাট অগ্রদূত শাখা, যুগান্তর স্বজন সমাবেশ প্রভাত ফেরী, আলোচনা সভা, পুষ্পমাল্য অর্পণসহ নানা কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শহীদ হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল্লাহ গ্রামে। মিয়া বক্স সরকারের পুত্র হারুনদের ৬ ভাই, ৩ বোন। নান্দাইল-আঠারবাড়ি সড়কের পাশেই ৬৯ এ গণআন্দেলনে শহীদ আজিজুল হক হারুন চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন। জরাজীর্ণ কবরটি এলাকার লোকজনের সহায়তায় কিছু ইট দিয়ে ঘেরাও করে রাখা। কবরের পাশে এসে এখন আর কেউ হারুণকে স্মরণ করেন না।

পরিবার সূত্র জানায়, হারুনের ছোট ভাই শফিকুল আলম চাঁন মিয়া তখন পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গৌরিপুর গেলেও কোন পরিচয় না দিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে পুলিশ লাশ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। পরে তিন দিন পর ময়মনসিংহ থেকে মুচিলেকা দিয়ে ভাইয়ের লাশ নিয়ে নান্দাইলে আসে এবং পুলিশি প্রহরায় লাশ দাফন করা হয়। ৬৯’র গণঅভ্যূত্থানে শহীদ আসাদ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেও আজও হারুণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি।

গৌরীপুর কলেজের তৎকালীন ভিপি ও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক জানান, ১৯৬৯সালের ২৭ জানুয়ারি গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়, আরকে উচ্চ বিদ্যালয় ও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘জয় বাংলা, তুমি কে আমি কে, বাঙালী বাঙালী, জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো, ৬দফা-১১দফা মানতে হবে-মেনে নাও শ্লোগানে পুলিশের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিলটি মধ্যবাজারে আসা মাত্র পুলিশ গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন আজিজুল হক হারুন। ঘটনার ৪৩বছর পর সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ২০১২সনে হারুনের স্বীকৃতিতে ‘শহীদ হারুন স্মৃতি সৌধ’ নির্মাণ করেন। তবে এখন পর্যন্ত হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি।
(এসআইএম/এস/জানুয়ারি২৬,২০১৬)