লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : প্রতিবছরের মতো এবারও ওরা এসেছে একটু উষ্ণতার খোঁজে। শীতকাল এলেই উপকুলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের জলাশয়, বিল, হাওড়ে ভরে যায় নানা রংবেরঙের নাম না জানা অনেক পাখি।

আদর করে আমরা সেগুলোকে বলি অতিথি পাখি। নাম অতিথি হলেও মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা বিভিন্ন চরে এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে। তবে অতিথি পাখির আগমনকে লক্ষ্য রেখে তৎপর বেড়ে যায় রাক্ষসে শিকারীদের।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা চর পাতারচর, বয়ারচর, চরমেঘা, তেলিরচরসহ বিভিন্ন চরে বেশি দেখা যায় অতিথি পাখি। চলতি মৌসুমে দেখা যায় নানা ধরনের অতিথি পাখি। এর মধ্যে সাদা বক, বালি হাঁস, পানকৌড়ি উল্লেখ্য যোগ্য। এছাড়াও নাম না জানা অসংখ্য পাখি রয়েছে অতিথি পাখির দলে। শীতের শুরুতেই এরা আসতে থাকে দল বেঁধে। পুরো শীত পড়া পর্যন্ত আসতেই থাকে। অতিথি পাখির এই আগমন যেন প্রকৃতিতে বয়ে আনে ভিন্ন সৌন্দর্য। প্রচন্ড শীত থেকে বাঁচতে সূদুর সাইবেরিয়া থেকে এ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসে আশ্রয় নেয় আবার কিছু পাখি পেশাদারী শিকারীর নজরে পড়ে প্রাণ হারায়।

মেঘনার জেগে উঠা চরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিগত দশ বছরের আগের তুলনায় বর্তমানে পাখি আসার সংখ্যা কমে গেছে। আগে শীত মৌসুমে যে পাখি আসতো বর্তমানে তার চেয়ে অনেক কম আসে লক্ষ্মীপুরের জলাশয়গুলোতে।

আবার বাদামী ও হালকা সোনালী রংয়ের অনেকটাই বেলে হাসের মতো দেখতে পাখিগুলো কচুরীপানার সাথে মিলেমিশে একাকার। ওদের কিচিরমিচির আলাপনের শব্দ না হলে বোঝার উপায় নেই এত পাখির সমারোহ। মৎস্য শিকারীদের অবাধ যাতায়াতের কারনে এসকল পাখিও চরম ঝূঁকিতে রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌরীরহাট এলাকায় রহমত খালী নদীর কাছে বসবাসরত বৃদ্ধ আব্দুল মুন্সী বলেন, ‘এখন পাখি আসা কমে গেছে অনেক। তার পরও শীত মৌসুমে শত শত পাখি আসে। মাঝে মধ্যে শিকারীদের দেখা গেলেও এলাকাবাসীর জন্য তারা শিকার করতে পারে না। এই এলাকার লোকজন এই পাখিগুলোকে আপনজনের মতো মনে করে।’

বয়ারচরের কৃষক শাহাআলম বলেন, শিকারী না থাকলেও যারা মাছ ধরে তারা মাঝে মাঝেই পাখি ধরে খায়। এই মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পাখিগুলো নিরাপদ থাকতো।

তেলিরচরের সিরাজ মাঝি বলেন, প্রতি বছর শীতেই তেলিরচরে হাজার হাজার অতিথি পাখি আসে। তবে এবার এসেছে আরো বেশি। নদীর পাড়ে ওরা থাকে। কাউকে বিরক্ত করে না।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু দিনদিন এ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ বাড়তে থাকায় এই মৌসুমে পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্য খুব একটা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে অতিথি পাখি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

(এমআরএস/এএস/জানুয়ারি ২৭, ২০১৬)