রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরের পীরগাছায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আবু সিদ্দিক নামে (৪০) এক সবজি বিক্রেতাকে হত্যার দায়ে তিনজনের ফাঁসি ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় দেন।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ২ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছোট কল্যানী গ্রামে আজিম উদ্দিনের ছেলে আবু সিদ্দিককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় একই গ্রামের আব্দুস সাত্তার, নুর মোহাম্মদ, আব্দুল ও ফরহাদ হোসেন। এর পরের দিন আবু সিদ্দিকের মরদেহ তাদের বাড়ির পাশে একটি ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত আবু সিদ্দিকের বাবা আজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পীরগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন। পরে মামলার বাদী নিহত আবু সিদ্দিকের বাবা আজিম উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ৯ আগস্ট সিআইডি ৪ আসামির নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এ মামলায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত বৃহস্পতিবার দুপুরে আসামি নুর মোহাম্মদ, আব্দুল ও ফরহাদ হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ এবং অপর আসামি আব্দুস সাত্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।

মামলার বিবরণে জানা জায়, স্থানীয় হাট বাজারে সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেন আবু সিদ্দিক। তার স্ত্রী রানু বেগম অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। আসামি আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে কাজ করার সময় প্রায়শই রানু বেগমকে উত্ত্যক্ত করতেন এবং তাকে কুপ্রস্তাব দিতেন আসামী আব্দুস সাত্তার। রানু বেগম বিষয়টি তার স্বামী নিহত আবু সিদ্দিককে জানালে আসামি সাত্তারের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় আসামী আব্দুস সাত্তার তাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। এরপরই আবু সিদ্দিককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে আসামি আব্দুস সাত্তারসহ অন্যান্যরা হত্যা করে লাশ ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে চলে যায়।

বিচারক তার রায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে এ রায় প্রদান করেন।

মামলায় সরকার পক্ষের আইনজিবী এপিপি ফারুখ হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩ আসামির ফাঁসি ও এক আসামির যাবজ্জীবন কারােণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রহমান বলেন, তারা ন্যায় বিচার পাননি। এ আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২৮, ২০১৬)