মাদারীপুর প্রতিনিধি :মাদারীপুরে সরিষা, ধনিয়া, কালোজিরাসহ রবিশস্যের ক্ষেতে ভ্রাম্যমাণ মৌচাষের মাধ্যমে সাবলম্বী হচ্ছে বেকার যুবকরা।

জেলার প্রায় অর্ধশত বেকার যুবক ভ্রাম্যমাণ মৌচাষী জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয়ে মৌমাছি পালন করে। জানয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করে ৬ লাখ টাকারও বেশি তাদের আয় হয়। তবে বিক্রয় ও বিপনণ ব্যবস্থার প্রসার না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেকেই। অপরদিকে সুলভে মধু কিনতে পেরে খুশি স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, এক সময় শুধুমাত্র সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ সুন্দরবন ও আশ-পাশের এলাকার লোকজন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষে জড়িত ছিল। এখন মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জসহ মধ্যাঞ্চলের বেকার তরুণরাও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

এরই অংশ হিসেবে মাদারীপুরের সদর, কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার বিভিন্ন রবিশস্যের ক্ষেতের দিকে তাকালে চোখে পড়ে শত শত ভ্রাম্যমাণ মৌচাষের বাক্স।

এক একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে ১শ’ টিরও বেশি বাক্স নিয়ে এক একজন মৌচাষী প্রতি সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করছে। তবে মধু উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও বাড়েনি বিপনণ। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে ক্রয়, বিপনণ-সংরক্ষণ ও ব্যাংক ঋণের সহযোগিতা চেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষীরা।

এক সময় কৃষকদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা থাকলেও বিগত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে এখানে মৌচাষ করায় বেড়েছে তাদের ফলন।

কালকিনির ফাসিয়াতলা এলাকার বাসিন্দা আ. রব মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর এই দিনে ভ্রাম্যমাণ মৌচাষের বাক্স নিয়ে কৃষকরা আমাদের এলাকার রসি শস্য ক্ষেতে আসেন। তারা মধু সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে আমরা সুলভে মধু ক্রয় করি। যা খেতে অনেকটাই স্বুসাদু।’

মৌচাষী আকতার হোসেন বলেন, আগে সংসার চালাতে কষ্ট হতো, কিন্তু মৌচাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তণ এসেছে। প্রতিবছর মৌচাষে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা লাভ হয়।

শিবচরের কৃষক আব্বাস আলী বলেন, ‘সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌচাষে জেলা ও উপজেলার কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক আমাদের সহযোগিতার করছেন।’

কালকিনির কৃষক রোমান মিয়া বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ মৌচাষ শুরু করেছি। শীতের মৌসুমে পরিশ্রম করে মধু বিক্রি করে সংসার চালাই। বেশ ভালই আছি।’

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরিষা, ধনিয়া, কালোজিরাসহ সব ধরণের রবিশস্যের পরাগায়নে সহায়তা করে মৌমাছি। এতে ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই জেলার বাইরে থেকে আসা মৌচাষীদের দেখে উদ্ধুদ্ব হয়ে এ বছর মাদারীপুর জেলার ৪০ জন বেকার তরুণকে মৌ-চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা ভ্রাম্যমাণ মৌচাষ করে সবাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছে।’

(এএসএ/এস/জানুয়ারি৩১,২০১৬)