আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির মূল কারণ যেন রাহুলই। গত সপ্তাহে সংসদীয় দলের বৈঠকে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হারের কারণ নিয়ে ময়নাতদন্তের নামে পারস্পরিক দোষারোপ এবং ঝগড়া বন্ধ করতে হবে।

কিন্তু অবস্থা এখন এতটাই শোচনীয় যে নেত্রীর নির্দেশে কান দেওয়া দূরস্থান, ঘুরেফিরে নিশানা হচ্ছেন তার পুত্রই।

গত দুই দিন কেরালার পর শুক্রবারও রাজস্থানে সেই বিদ্রোহের চিত্রনাট্যই মঞ্চস্থ হয়েছে। রাহুলের বিরুদ্ধে সরব দলের রাজ্যস্তরের ছোট-বড়-মাঝারি মাপের নেতারা। শুক্রবার কংগ্রেসের বিধায়ক তথা রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা ভানওয়ার লাল শর্মা শুধু রাহুলই নন, সরব হয়েছেন প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধেও। জানিয়েছেন, সময় এসেছে রাহুল-প্রিয়াঙ্কার বাইরে গিয়ে কংগ্রেসকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার। রাহুল গান্ধীর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, নেহাতই পরিবারের সদস্য হিসেবে সবরকম কর্তৃত্ব উপভোগ করছেন রাহুল। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাকে দলে ঢুকতে হয়নি।

সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি গতকাল চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন 'পরিবারকে'। 'প্রিয়াঙ্কা লাও রাহুল লাও' স্লোগান দেওয়া দলের সদস্যদের উদ্দেশে তার পরামর্শ, অন্য প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা শুরু করে দেওয়া উচিত। রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের একটি অংশ জানাচ্ছে, একা ভানওয়ার লাল শর্মাই নন, রাজ্য কংগ্রেসের অনেক নেতা এবং কর্মীও সহমত প্রকাশ করেছেন তার সঙ্গে। রাহুল এবং অন্য নেতাদের অবস্থানের তফাত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কিছুটা শ্লেষের স্বরে ভানওয়ার লাল শর্মা বলেছেন, রাহুল হলেন প্যারাশুটে নামা নেতা। তার সঙ্গে তাই তৃণমূলস্তরের নেতাদের সংঘাত অনিবার্য।

কংগ্রেস সূত্র জানায়, এই ভানওয়ার লাল শর্মার কথার কোনো গুরুত্বই নেই। লোকসভা নির্বাচনে তার মেয়ের টিকিট না পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ রাজনীতি করছেন এক মাস ধরে। এই ব্রাহ্মণ নেতা এর মধ্যে বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার সঙ্গেও দেখা করে আগাম কথা বলে এসেছেন। এআইসিসির এক নেতার বক্তব্য- 'তিনি নিজেই চান দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করতে। তাই আগাগোড়া রাহুল গান্ধীর নিন্দা করে যাচ্ছেন।'

কংগ্রেস সূত্রের খবর- এবার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভানওয়ারই শুধু নন, ঠিক দুই দিন আগে কেরালার কংগ্রেস নেতা টি এইচ মুস্তাফা রাহুলকে 'ভাঁড়' বলে উল্লেখ করে তাকে দলের সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ফলস্বরূপ তাকে দল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু মুস্তাফার পর্যায়ের নেতা প্রকাশ্যে রাহুল গান্ধীর সম্পর্কে এমন মন্তব্য করছেন, এমন ঘটনা এক মাস আগেও চিন্তার বাইরে ছিল। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য- এ ঘটনাগুলো থেকে একটা সত্য স্পষ্ট যে দলের অভ্যন্তরে রাহুলবিরোধী বিক্ষোভ কিন্তু আর গোপন থাকছে না। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওমন চণ্ডী, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কে ভি থমাস, কেপিসিসি-প্রধান ভি এম সুধীরান, প্রবীণ নেতা পি সি চ্যাকোর উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাব পাস করা হয় কেরালা প্রদেশ কংগ্রেসের তরফ থেকে। সে প্রস্তাবে বলা হয়- একজন যথার্থ শক্তিশালী নেতাকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। জাতীয় স্তরে কোনো আকর্ষণীয় প্রচার করা হয়নি। পর দিন অবশ্য এ প্রস্তাবের বদল করে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করা হয়। সেখানে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর 'সাহসী নেতৃত্বের' প্রশংসাই করা হয়েছে। বস্তুত ভোটের ফল ঘোষণার কিছু আগে থেকেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব এবং তার কর্মপন্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দলের অভ্যন্তরে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, উত্তরপ্রদেশ সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নিছক আর্থিক ক্ষতিপূরণের কোনো মানেই হয় না। ঘটনার শিকার ওই মেয়ে দুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে, সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে রাজনৈতিকভাবে দলের মধ্যে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছেন তিনি। এক বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য- 'এমনটা নতুন নয়। অতীতে যতবারই ভরাডুবির মধ্যে পড়েছে কংগ্রেস, ততবারই দলে ভাঙনের পরিস্থিতি হয়েছে।' ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ টেনশনের কথাও এ প্রসঙ্গে তুলে আনছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কামরাজের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর সংঘাতে '৬৯ সালে দলে ভাঙন ধরার ইতিহাস বলছে, এমন ঘোরতর পরিস্থিতি এর আগে কংগ্রেসের ইতিহাসে কখনো হয়নি। তাই এ সংকট কাটাতে গান্ধী পরিবার এখন কোন পথে হাঁটে, সেদিকেই নজর রাখা হচ্ছে।

(ওএস/এটিঅার/জুন ০১, ২০১৪)