রাবি প্রতিনিধি : আজ ২ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সালের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এতে সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু দুই বছর অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেইনি, অন্যদিকে কমিটির কয়েকজন সদস্যই অদ্যেই কমিটির সদস্য ছিল কিনা নিজেরাই জানে না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। অপরদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানো ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ। এদিকে ২ ফেব্রুয়ারিকে ‘শিক্ষা বাণিজ্য প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে গত বছর থেকে পালন করে আসছে ‘বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থী’ মঞ্চ।

আজ বিক্ষোভ ও সমাবেশ :
শিক্ষা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে চলমান স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিক আন্দোলনকে ২ ফেব্রুয়ারিকে ‘শিক্ষা বাণিজ্য প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে গত বছরের মত এবারো পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দেলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে পুনরায় গ্রন্থাগারের সামনে এসে একটি ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সান্ধ্যাকোর্স বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আয়াতুল্লাহ খমেনী বলেন, আমাদের সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাধারন শিক্ষার্থীদের ওপর মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, হামলাকারী ছাত্রলীগের আস্ত্রধারী ক্যাডারদের বিচার করতে হবে, সান্ধ্যা কোর্স বাতিল ও বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত বর্ধিত ফি বাতিল করতে হবে।

আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন :
ঘটনার এক বছর পার হলেও ২ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন নি। তদন্ত কর্যক্রম কি অবস্থায় আসে জানার চেষ্টা করলে, প্রশাসন থেকে শুরু তদন্ত কমিটির কোন সদস্যই এব্যাপারে সদ্-উত্তর দিতে পারেনি। কমিটির কয়েকজন সদস্যই জানেন না তিনি কমিটির সদস্য ছিলেন কিনা?

তদন্ত কমিটির আহ্ব্য়াক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. খালেকুজ্জামানানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা তাকে পাওয়া যায়নি।
কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. এন্তাজুল হক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে কিনা মনে নেই, তবে দেখে বলতে পারব।
এছাড়া কমিটির অন্য সদস্য রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম, সিন্ডিকেট সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম হোসেন যোগাযোগ করা হলেও কোন রকম তথ্য পাওয়া যায়নি।

ধরা পড়েনি অস্ত্রধারীরা :
২ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ছয় নেতা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়েছিলেন। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ ও শামসুজ্জামান ইমন, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিম বিল্লাহ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম। ঘটনার দুই বছর অতিবাহিত হলেও ধরা পড়িনি কোন অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ক্যাডার। তারা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোন রকম মাথা ব্যাধা নেই।

মামলা তুলে নেয়নি প্রশাসন :
২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনার একদির পর নগরীর মতিহার থানায় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারটি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীসহ ১৯০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে, বেআইনি সমাবেশ, মারামারি, সরকারি কাজে বাধাদান ও ভাঙচুরের অভিযোগে ২০০ জনকে আসামি করে এবং বিস্ফোরক আইনে আরও ২০০ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই অভিযোগে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে আরও দুটি মামলা করে মতিহার থানা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব মামলা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও এখনও তা তুলে নেয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্স বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কিংশুক কিঞ্জল বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর তাদের হয়রানি করতে যে চারটি মামলা করা হয়, সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আমরা মামলা তুলে নিতে বলছি, অন্য দিকে পুলিশ বলছে প্রশাসনের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে মামলা প্রত্যাহার করা হবে কিনা। আমরা প্রশাসনের এই ধরনের আচারণে হতাশ।
বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বলেছিলাম মামলা প্রত্যাহারের জন্য, তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছে আমার জানা নেই।

মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মু. এন্তাজুল হক বলেন, ‘অনেক দিন আগের ঘটনা মনে নেই, লিগ্যাল সেলে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও বিভিন্ন বিভাগে চালুকৃত সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এতে সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোয়ার্টার জুবেরী ভবন ও বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবন ও হলে ভাঙচুর চালায়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠকে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

(ইএসএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬)