লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : ঋতুরাজ বসন্তের আগেই উপকুলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুরে আমো মুকুলেই জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের ঘ্রাণ। এখানকার বাতাস এখন আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করে।

শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে সর্বত্র আম গাছগুলো তার মুকুল নিয়ে হলদে রঙ ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। মুকুলের আধিক্য দেখে ভাল ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন এই অঞ্চলের মানুষ।

সরেজমিনে সদর উপজেলা, রায়পুর, রামগঞ্জ ও কমলনগরে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা গুলোতে আম গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত ঘ্রাণ। তবে এবারও আমের ফলন নির্ভর করছে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন এই জেলায় বাসিন্দা। আম বলতে এক সময় উত্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীকেই বোঝাত। কিন্তু এবার লক্ষ্মীপুরে ছোট-বড় ও মাঝারি গাছ গুলোর অবস্থা অনেকটা ভিন্ন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আমের মুকুল আসার আগে-পরে যেমন আবহাওয়ার প্রয়োজন, এখানে তা বিরাজমান। ডিসেম্বরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আম গাছে মুকুল আসার আদর্শ সময়। এ সময়ে মুকুলের প্রধান শত্রু কুয়াশা। এখন পর্যন্ত কুয়াশা কম এবং আকাশে উজ্জ্বল রোদ থাকায় আমের মুকুল সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। কিছু গাছের মুকুলে পাথরদানা দেখা গেলেও এতে ক্ষতির কিছু নেই। এবার গাছে যে পরিমাণে মুকুল এসেছে পাথরদানার কারণে আমের ফলন তেমন ব্যাহত হবে না। আরোও জানা যায়, আমের ফলন বাড়াতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।

সংশ্লিষ্টরা একটু সতর্ক হলেই শতভাগ ফলন পাওয়া সম্ভব। সাধারণত আমের মুকুল আসার পর হোপার পোকার আক্রমণ ও অ্যানথ্রাকনোজ রোগ হয়ে থাকে। এজন্য আমের গুটি মটর দানার মতো হওয়ার পর দুইবার গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে অনেককে পরামর্শ দিয়ে থাকি। প্রতি লিটার পানিতে মেশাতে হবে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের তরল কীটনাশক ০.২৫ গ্রাম। আর দানাদার কীটনাশক হলে ০.২ গ্রাম। এর সাথে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ০.২ গ্রাম। এই নিয়মে আম গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এতে আম গাছ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে এবং ভালো ফলন হবে।

রায়পুর পৌর সভার কাঞ্চনপুর এলাকার ইফাত ও আজাদসহ আরো কয়েক ব্যক্তি জানান, বাড়ির আশ-পাশে বিভিন্ন জাতের শতাধিক আম গাছ লাগিয়েছেন। ইতোমধ্যে এসব গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। গাছের পুরো মুকুল ফুটতে আরো কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে তিনি জানান। তারা আরোও জানান, মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছগুলোতে। তবে বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মানুষের চোখে ভাসছে স্বপ্ন।

গত বছর আবহাওয়ার কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো জেলায়। এবার মুকুলের ভারেই আমগাছের ডাল নুইয়ে পড়ছে। চলতি মৌসুমে যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে তাহলে এবার লক্ষ্মীপুর জেলায় বিগত বছরের তুলনায় রেকড করা আম উৎপাদন হবে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরের তুলনায় এই জেলায় এবার আমের ফলন রেকড ছাড়িয়ে যাবে।

(এমআরএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬)