নওগাঁ প্রতিনিধি : পাঁচ-ছয় বছর ধরে পুকুর পাহারা দিয়ে আসছিলেন নিহত মমতাজ হোসেন। মাসে তিনি পেতেন ২ হাজার ৮শ’ টাকা। কিন্তু হঠাৎ করেই নিখোঁজ হবার দুইদিন আগে থেকে তিনি আর পুকুরের পথে পা বাড়াননি। চুপচাপ বসে ছিলেন বাড়িতেই। চিন্তিত দেখাচ্ছিল তাকে। কোনো সমস্যা হয়েছে কি- না তা জানতে চেয়েছিলেন ছেলে আবুল কালাম।

উত্তরে মমতাজ হোসেন ছেলেসহ পরিবারের সদস্যদের জানান, তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কারা তাকে হুমকি দিয়েছে এ তথ্য জানাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা। গত ২ ফেব্রুয়ারি পুকুর মালিক তৈবুর রহমান তাকে প্রায় জোর করেই বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর থেকেই আর সন্ধান পাওয়া যায়নি মমতাজ হোসেনের।

হঠাৎ করেই বুধবার সকালে পুকুরপাড়ে তার লাশ মিলে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফতেপুর গ্রামের ছোট বাজপুকুর নামে পরিচিত ওই পুকুরই পাহারা দিতেন তিনি। নিহত মমতাজ স্থানীয় মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত আয়নাল হকের ছেলে।

নিহতের ছেলে আবুল কালাম জানান, পুকুর মালিক তৈবুর রহমান তার বাবাকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরদিন দুপুর গড়িয়ে গেলেও তিনি খেতে আসেননি। তাই বাবার কথা মোবাইলফোনে জানতে চেয়েছিলেন তৈবুর রহমানের কাছে। তইবুর জানিয়েছিলেন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অজানা আশঙ্কায় আবুল কালাম স্বজনদের নিয়ে পুকুর পাড়ে ছুটে যান। তন্নতন্ন করে খুঁজেও তারা মমতাজ হোসেনকে পাননি। ঘটনায় দফায় দফায় পুকুর মালিকের সঙ্গে কথা বলেন তারা। থানা পুলিশকেও অবহিত করতে চান। কিন্তু পুলিশি ঝামেলায় যেতে বাধা দেন পুকুর মালিক তৈবুর রহমান। এ অবস্থায় হঠাৎ করে নিখোঁজের ৮ দিন পর ওই পুকুরপাড়েই জনৈক আবু সুফিয়ানের বাড়ির মাত্র চারগজ দুরে মমতাজ হোসেনের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। পাতা ঝাড়– দিতে গিয়ে সুফিয়ানের স্ত্রী মনোয়ারা বিবি লাশটি দেখে চিৎকার দিলে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা মমতাজ পরিবারসহ পুলিশকে খবর দেন।

এদিকে লাশ উদ্ধারের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন, পুকুর মালিক তৈবুর রহমান। উপজেলার জয়বাংলা মোড়ে তার সার-কীটনাশকের দোকানটিও দুইদিন থেকে বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়িরা জানান।

নিহতের প্রতিবেশি মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা তুহিন, আলমগীর হোসেন, মমতাজ হোসেন, লতিফা বিবিসহ আরো অনেকে জানান, মমতাজ হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। একই দাবি করছেন নিহত মমতাজ পরিবারের সদস্যরাও। কিন্তু পুলিশ ইউডি মামলা রজু করে লাশটি উদ্ধার করেছে। ঘটনায় হত্যা মামলা না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিবারের সদস্যসহ তাদের সন্দেহের তীর ধাবিত হচ্ছে পুকুর মালিক তৈবুর রহমানের দিকে।

থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, ইউডি মামলা নিয়ে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের সন্দেহ তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ঘটনাটি তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক মজিবর রহমান।

(বিএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬)