মাদারীপুর প্রতিনিধি :মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের পূর্ব আলীপুর গ্রামে নয় বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এই ঘটনায় শুক্রবার রাতে কালকিনি থানায় ধর্ষণ মামলা হয়েছে।

স্থানীয়, পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলীপুর গ্রামে বাড়ির পাশে অন্য শিশুদের সাথে খেলা শেষে ঘরে ফেরার পথে রাস্তা দিয়ে আসার সময় প্রতিবেশী ইউনুস সরদার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ওই শিশুকে মুখ চেপে জোর করে পাশে পুকুর পারে একটি সরিষা খেতে নিয়ে যায়। এরপর তাকে জোর করে ধর্ষণ করে।

এই ঘটনায় শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং রক্তপাত শুরু হয়। লোক লজ্জার ভয়ে প্রথমে এই ঘটনাটি চেপে যেতে চাইলেও শিশু গুরুতর অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে পরের দিন শুক্রবার সকালে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির রক্তপাত বন্ধ না হলে তাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানে শিশুটি চিকিৎসাধীন আছে। পরে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে ধর্ষিতার পরিবার থেকে শুক্রবার রাতে কালকিনি থানায় ধর্ষণ করা করা হয়।

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহ্মুদা আক্তার কণা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার দুপুরে শিশুটির ব্যাপারে তার খালুর সাথে কথা বলেছি। শিশুর বাবা নেই। তাই খালুই তার দেখা শোনা করেন। শিশুটি ধর্ষণের শিকার হবার পর থেকে খুব অসুস্থ্য। এখনও তার রক্তপাত বন্ধ হয়নি। রাতে এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামীকে ধরার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শিশুটিকে আইনী সহায়তাসহ চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।

মাদারীপুর নারী উন্নয়ন সংস্থা নকশি কাথার নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী বলেন, প্রয়োজন হলে আমাদের সংস্থা থেকে শিশুকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। সেই সাথে দ্রুত যেন ধর্ষককে গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচারের ব্যবস্থা করা হয়, সেই দাবি জানাই।

শিশুটির মা, খালা ও খালু মোবাইল ফোনে জানায়, পূর্ব আলীপুর গ্রামের জব্বার সরদারের বখাটে ছেলে ইউনুস সরদারকে (৩০) প্রধান আসামী করে আরো ২জনকে অজ্ঞাত রেখে শুক্রবার রাতে শিশুটির মামা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। শিশুটির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শনিবার দুপুরে শিশুটির অপারেশন হচ্ছে বলে শিশুটির মা জানান।

শিশুটির মা আরো জানান, প্রায় ৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমভাবে দিন কাটাই। সবাই ছোট। তাই সব দায়িত্ব আমার। ওর চিকিৎসা চলছে। আমার মেয়ের অবস্থা গুরুতর। ওষুধ কিনতে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। জানিনা কিভাবে এই টাকা যোগার করতে পারবো।
শিশুটির মা কেদে কেদে আরো বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ। আমাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেলো। মেয়ে বড় হলে কিভাবে বিয়ে দিবো তাও জানিনা। আমরা ঐ ধর্ষক ইউনুস সরদারের সুষ্ঠু বিচার চাই। যাতে করে আমার মেয়ের মতো এমন ঘটনার শিকার কারো হতে না হয়।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ কৃপা সিন্দু বালা বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে।



(এএসএ/এস/ফেব্রুয়ারি১৩,২০১৬)