প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার : মিসেস জাহানারা বেগম পেশায় স্কুল শিক্ষিকা, বয়স ৪৫ বছর। দুই মাস আগে বালতিতে পানি ঢালতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান। কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা কমে যায়। কিন্ত হাঁটতে গেলে ডান পায়ে অল্প অল্প ব্যথা লাগতো।

গত ১৫ দিনে ব্যথা এতোটাই বেড়ে গেছে, তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। দাঁড়াতে গেলে ডান পায়ের মাংসপেশিগুলো ব্যথায় ফেটে যায়।

এখন তিনি স্কুলেও যেতে পারেন না। কোনো কাজতো দূরের কথা, বাথরুমে যেতেও দুইজনের কাঁধে ভর করতে হয়। তিনি পাঁচ বছর ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এখন হাঁটতে পারছেন না। তাই দিন দিন ডায়াবেটিসও বেড়ে যাচ্ছে।

কিছু ফিজিক্যাল পরীক্ষা করে দেখা গেল তার এখনি অপারেশনের দরকার নেই। যে উপসর্গে অপারেশন দরকার হয়- তার তা নেই।

তার ফিজিক্যাল পরীক্ষায় পাওয়া গেল স্লাম্প টেস্ট ডানদিকে পজেটিভ। এস.এল.আর ডান পায়ে ৫ ইঞ্চি, বাম পায়ে কোনো সমস্যা নেই। দুই পা বুকের দিকে ভাজ করে টানলে কষ্ট হয় না। উপুর হয়ে শুয়ে মাথা উঁচু করলে ডান পায়ে তীব্র ব্যথা হয়। কোমরের ডান দিকের মাংসপেশিতে চাপ দিলে কয়েক জায়গায় ব্যথা পান।

মিসেস জাহানারা বেগম আগে এক্সরে, এমআরআই পরীক্ষা করিয়েছেন। এমআরআই পরীক্ষায় দেখা গেছে- তার কোমরের লাম্বার-৫ এবং স্যারকাল-১ লেভেলে পোট্রুশন আছে। এক্সরে দেখা গেছে তার কোমরের ডান দিকের পেলভিস টিলটেড হয়ে আছে এবং ম্যাসেল (মাংস) ইনব্যালেন্স।

তার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি ও কার্যকর। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে পারবেন।

মিসেস জাহানারা বেগমের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হলো সায়েটিক নার্ভকে সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে চাপমুক্ত করা বা স্ট্রেসিং করতে হবে। লাম্বার-৫ এবং স্যাকরাল-১ লেভেলে বায়োম্যাকানিক্স অনুযায়ী মোবালাইজেশন করে নার্ভ রুটকে চাপমুক্ত করতে হবে। সঠিকভাবে মোবালাইজেশনের মাধ্যমে অতি দ্রুত চাপমুক্ত করা সম্ভব। এটা পরীক্ষিত।

বিভিন্ন গ্রুপের দুর্বল মাংসপেশিগুলোকে কাইনিসিওলজি বেজড ব্যায়ামের মাধ্যমে (যেমন-স্ট্রেসিং, স্ট্রেন্দেনিং এবং কোর স্ট্যাবিলিটি ইত্যাদি) শক্তিশালী ও স্ট্যাবল করতে হবে। এর সঙ্গে ফিজিওথেরাপি মোডালিটিসের মধ্যে লো-লেভেল লেজার থেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড ও ওয়াক্সপ্যাক থেরাপি ফলদায়ক।

সর্বোপরি ফিজিওথেরাপিউটিক ব্যায়াম বা ফিজিও মেডিসিনের মাধ্যমে মাংসপেশিগুলোকে এমনভাবে শক্তিশালী করতে হবে যাতে আর কখনো কষ্ট না হয়। উপদেশ অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেমন- নিয়মতি সঠিক ব্যায়াম করতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে, দৈনিক ৮-৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। ভাত জাতীয় খাবার এবং মিষ্টি খাবার কম খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় আদা ও আদার রস, হলুদ, কাঁচা পেপে, কালিজিরা থাকতে হবে।

সর্বশেষ একজন ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ব্যায়াম নিয়মিত করতে হবে।

(ওএস/এস/জুন ০১, ২০১৪)