মাদারীপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে সুয়ে এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ধর্ষিতা শিশু ৩য় শ্রেণির স্কুল ছাত্রী। এদিকে ঘটনার ৫ দিন পর সোমবার বিকেলে ধর্ষণের প্রধান আসামী ইউনুস সরদারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। সোমবার বিকেলে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের বিচারক নুরুন্নাহার ইয়াসমীন এ আদেশ প্রদান করেন।

অন্যদিকে ধর্ষকের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় শিশুটির পরিবারকে মামলা তুলে নেয়াসহ নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছে বলে পারিবারিকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া শিশুটি গুরুতর আহত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন মাদারীপুরের ছেলে ইতালি প্রবাসী ওয়াদুদ মিয়া ওরফে জনি মিয়া।

মাদারীপুর জজ কোর্টের পিপি মো. এমরান লতিফ জানান, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী ইউনুস আদালতে আত্মসমার্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে ইউনুসকে কোট পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার বিকেলে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ, স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাদারীপুরের কালকিনির এনায়েতনগর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে বাড়ির পাশে অন্য শিশুদের সাথে খেলা শেষে ঘরে ফেরার পথে রাস্তা দিয়ে আসার সময় প্রতিবেশী ইউনুস সরদার ওই শিশুকে মুখ চেপে জোর করে পাশে পুকুর পারে একটি সরিষা খেতে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ধর্ষণ করে।

এই ঘটনায় শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং রক্তপাত শুরু হয়। লোক লজ্জার ভয়ে প্রথমে এই ঘটনাটি চেপে যেতে চাইলেও শিশু গুরুত্বর অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে পরের দিন শুক্রবার সকালে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির রক্তপাত বন্ধ না হলে তাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছে।

পরে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে ধর্ষিতার পরিবার থেকে শুক্রবার রাতে কালকিনি থানায় ধর্ষণ করা করা হয়। মামলার পর থেকে আসামীর পরিবার মামলা তুলে নেয়াসহ নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এদিকে শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সমস্যার কথা শুনে মাদারীপুরের ছেলে ইতালী প্রবাসী ওয়াদুদ মিয়া ওরফে জনি মিয়ার পাঠানো ১০ হাজার টাকা শিশুটির মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয়।

সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বসে জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, ফ্রেন্ডস অভ নেচারের নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ, সাংবাদিক শাহজাহান খান ও আয়শা সিদ্দিকা আকাশীর উপস্থিতিতে এই টাকা দেয়াসহ শিশুটির ব্যাপারে সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।

এসময় শিশুটির মা কেঁদে কেঁদে বলেন, ২০১১ সালে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচসহ সংসারের সব খরচ যোগাড় করতে হয়। আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য এই ১০ হাজার টাকা আমার খুব উপকারে আসবে। তাছাড়া আসামীর পক্ষের লোকজন আমাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকিসহ বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাবার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমনকি তারা আমার স্বামীর ভিটাটাও দখল করার চেষ্টা করছে। আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি।

শিশুটির মা আরো জানান, আমরা গ্রামের মানুষ। আমাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেলো। মেয়ে বড় হলে কিভাবে বিয়ে দিবো তাও জানিনা। আমরা ঐ ধর্ষক ইউনুস সরদারের সুষ্ঠু বিচার চাই। যাতে করে আমার মেয়ের মতো এমন ঘটনার শিকার কারো হতে না হয়।

শিশুটির খালা ও খালু মোবাইল ফোনে জানায়, পূর্ব আলীপুর গ্রামের জব্বার সরদারের বখাটে ছেলে ইউনুস সরদারকে (৩০) প্রধান আসামী করে আরো ২জনকে অজ্ঞাত রেখে শুক্রবার রাতে শিশুটির মামা বাদী হয়ে মামলা করে।

মামলার বাদী ধর্ষিতার মামা বলেন, ‘এমন নোংরা কাজ করে আবার হত্যার হুমকি দিচ্ছে ইউনুসের পরিবার। আমরা দ্রুত এর বিচার চাই।’

একই এলাকার মুদি দোকানদার মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘নিষ্পাপ শিশুটির সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছে অভিযুক্ত লম্পট ইউনুসের দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি চাই। ওর ফাঁসি চাই। যা দেখে অন্য কেউ যেন এমন জঘন্য কাজ না করতে পারে।’

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহ্মুদা আক্তার কণা বলেন, শিশুটি ধর্ষণের শিকার হবার পর থেকে খুব অসুস্থ্য। শিশুটিকে আইনী সহায়তাসহ চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।

মাদারীপুর নারী উন্নয়ন সংস্থা নকশি কাথার নির্বাহী পরিচালক আয়শা সিদ্দিকা বলেন, দ্রুত ধর্ষককে গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্দু বালা বলেন, ‘কালকিনি থানায় ইউনুসকে প্রধান আসামী করে ধর্ষণ মামলা করেছে নির্যাতিত মেয়েটির মামা।

কালকিনি থানার এসআই সঞ্জয় বলেন, মামলার প্রধান আসামী ইউনুস আদালতে আত্মসমার্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে সোমবার বিকেলে জেলা কারাগারে পাঠায়।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ইতিমধ্যে শিশুটির চিকিৎসার ব্যাপারে ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলেছি। শিশুটির ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

(এএসএ/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬)