নওগাঁ প্রতিনিধি :নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সামগ্রী, শয্যা সংকট, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও কারিগরী উপকরণের অভাবে হাসপাতালটি এখন নিজেই ক্রমশঃ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

হাসপাতালের একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে। এতে সড়ক দূর্ঘটনা, মারামারি, জখমের মত গুরুতর অসুস্থ জরুরী রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালসহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা ঢাকাতে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘ চার বছর ধরে বিকল হয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা গুরুতর অসুস্থ রোগীরা যথা সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জরুরী চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা নিরুপায় হয়ে বেশী টাকা খরচ করে কোন প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাদের মৃত্যু পথযাত্রী রোগীদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী, বগুড়া, ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, রানীনগর উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে রাণীনগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিগত ১৯৮৪সালের সারা দেশের মত উপজেলা পরিষদ প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই উপজেলায় ৬.২৫ একর জমির ওপর ৩১শয্যা বিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কয়েক দফায় হাসপাতালের অভ্যন্তরে ওয়ার্ড ও আবাসিক ভবন গুলো সংস্কার করা হলেও জরুরী রোগীদের প্রয়োজনে ১৯৮৬ সালে রেজিষ্টেশনকৃত নওগাঁ-চ ০২-০০১৩ নম্বরের একটি এ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে এ্যাম্বুলেন্সটি খোলা আকাশের নীচে পড়ে থেকে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সুনজর না পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে থাকা এই এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা।

চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় বিআরটিএ কর্তৃক বিগত ২০১২সালের ১৪ অক্টোবর এ্যাম্বুলেন্সটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জরুরি রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিশেষ অনুরোধে বিগত ২০১৪সালের ১২ মার্চ নওগাঁর সিভিল সার্জনের বিশেষ নির্দেশে ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লক্কর-ঝক্কর একটি পুরনো এ্যাম্বুলেন্স রাণীনগর হাসপাতালে দেয়া হয়। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ রোগী বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এর মধ্য থেকে প্রায় ১৩টির মত জরুরি রোগী উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমান এ্যাম্বুলেন্সটির যথাযথ ফিটনেসের অভাবে গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরকে কোন মতে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পৌঁছানো গেলেও রোগীর স্বজনরা চাইলেও জেলা সদর ব্যতিত দূরে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারে না।

রোগীদের প্রয়োজনে প্রতিদিন চলাচলের কারণে এই গাড়িটিও যে কোন মহুর্তে বিকল হয়ে যেতে পাড়ে বলে চালক কামরুজ্জামান মন্ডল জানান। স্থাণীয় সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম এমপির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে প্রায় দুই লাখ মানুষের জরুরী চিকিৎসার স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি নতুন এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবী জানিয়েছে উপজেলাবাসী।

রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মুনির আলী আকন্দ জানান, প্রায় তিন দশকের পুরনো এ্যাম্বুলেন্সটি বিআরটিএ কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় জরুরি রোগীদের তাৎক্ষনিক ভাবে উন্নত চিকিৎসা দেয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। আমার দপ্তর থেকে অনেক চিঠি চালাচালির পরে গত ২০১৫সালের জুনের দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রাণীনগর হাসপাতালে দেয়ার কথা আমাদেরকে জানালে, সেটি নেয়ার জন্য আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমাদেরকে এ্যাম্বুলেন্স না দিয়ে অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেয়া হয়। অদ্যাবধি রাণীনগর বাসীর জন্য নতুন এ্যাম্বুলেন্স কবে দেয়া হবে? তা অফিসিয়ালি এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি।

(বিএম/এস/ফেব্রুয়ারি১৬,২০১৬)