নিউইয়র্ক থেকে এনা: বাংলাদেশ পুলিশের নারী শান্তিরক্ষী ইউনিট ক্যারিবীয় দেশ হাইতিতে দায়িত্ব পালনকালে তাদের সাহসী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র “সহস্র মাইলের একটি যাত্রা: শান্তিরক্ষী” গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে প্রদর্শিত হয়।

ফিল্ম একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা গীতা গাম্বীর ও শারমিন ওবায়েদ-চিনয় এর পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের ১৬০ জন নারী পুলিশের জুন ২০১৩ থেকে এক বছর তাদের পরিবার- পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও ঘনিষ্ঠজনদের ছেড়ে দেশ থেকে অনেক দূরে হাইতিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। চলচ্চিত্রটিতে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চিত্রও তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী, বিবাহিত মা ও অবিবাহিত কন্যা নিয়ে গঠিত এই শান্তিরক্ষী ইউনিটই বিশ্বের প্রথম পূর্ণ নারী শান্তিরক্ষী ইউনিটের একটি। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই চলচ্চিত্রটিতে কয়েকজন সাহসী নারী শান্তিরক্ষীর পারিবারিক, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি শান্তিমিশনেও যেসব সমস্যা সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করেছেন তা তুলে ধরা হয়। এভাবেই তারা হাইতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও চার শতাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। সব দর্শক বাংলাদেশের নারীদের এই সাহসিকতা ও ত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীরা বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করায় তাদের প্রশংসা করেন।জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তারা নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন যা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এর মধ্য দিয়ে শান্তি রক্ষায় লিঙ্গসমতা আনয়নে বাংলাদেশ পথ-প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীরা সকল ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। নির্মিত চলচ্চিত্র জাতিসংঘে প্রদর্শন তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ সেনা ও পুলিশ নিয়োগকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দায়িত্ব পালন করছে। শান্তিরক্ষায় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বাংলাদেশ তার অবদান বাড়িয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, এই ১৬০ জন নারী পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষী ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রোল মডেলের ভূমিকা পালন করছে। নতুনরা তাঁদের থেকে শিখতে পারছে, জানতে পারছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রায় অবদান রাখার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে।

তাদেরকে অনুসরণ করে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮৬২ জন নারী পুলিশ সদস্য হাইতি ও কঙ্গো মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাতিসংঘ পুলিশ উপদেষ্টা বলেন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীটি বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ পুলিশের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব জোরদার করার একটি সুযোগ তৈরী করেছে।


(এনা/এস/ফেব্রুয়ারি১৮,২০১৬)