হাবিবুর রহমান : “আমাদের দেশে কত গ্রাম গঞ্জ, ছোট বড় কত শহর, কত রকম নাম । সব নাম ছাপিয়ে ছোট্ট একটি গ্রাম সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের ইতিহাসে, টুঙ্গিপাড়া।

টুঙ্গিপাড়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখার একটি নাম, শেখ মুজিবুর রহমান”। সাদা খোদাই করা একটি বইয়ে হাত রেখে একপাশ থেকে অপর পাশ স্পর্শ করে অবিরত পড়ে যাচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিপা তাবাসসুম।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পড়ছে এমন অবস্থা দেখে উৎসুক জনতা ভীড় জমাচ্ছে প্রাণের বই মেলায় ‘স্পর্শ ব্রেইল’ প্রকাশনীর স্টলে। রিপা তাবাস্সুমের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ছাড়াও প্রতিদিন হাজারো উৎসুক জনতা প্রতিনিয়ত আসছে এখানে। কেউ বই দেখছে, কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়া শুনছে, আবার কেউ কৌতুহলী মন নিয়ে ব্রেইল প্রদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইছে। আর এইসব কৌতুহলী জনতার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন প্রকাশক ও লেখিকা নাজিয়া জাবীনসহ স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলের সহযোগীরা।

স্টলের সহযোগী আশিকুর রহমান বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা এখানে বই পড়তে এসে যে আবেগ প্রকাশ করে এবং তাদের পড়া দেখে কত যে ভালো লাগে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। যখন তারা বই পেয়ে বলে আমাদের আরো বই চাই, তখন মনে হয় কিছু বই তাদের তৈরি করে দিতে পারতাম, তবে আরো অনেক ভালো লাগতো।

২০০৯ সালে বই মেলায় স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী প্রথম ব্রেইল প্রদ্ধতিতে বই প্রকাশ করে। এই বারই প্রথম বাংলা একাডেমীর সহযোগিতায় সৈয়দ শামসুল হকের লেখা বঙ্গবন্ধুর বীর গাঁথা বইটি স্পর্শ প্রকাশ করে। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ব্রেইল প্রদ্ধতিতে বই মেলায় বই পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিপা তাবাস্সুম বলেন, অনেক ভালো লাগছে। আমরা আরো বড় বড় কবি, সাহিত্যিক, লেখক যেমন কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবানান্দ দাশের বই চাই।

বদরুন্নেছা কলেজে পড়ুয়া আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোরশেদা আক্ষেপ করে বলেন, দুই বছরের মধ্যে এইচ.এস.সি পাশ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। পড়াশোনা করতে ভালো করে পাঠ্য বই পাইনা আর সাহিত্য বই পাবো কোথায়। তবে বই মেলায়ও ব্রেইলে সাহিত্য বই পাওয়া যায়, এটা আমাদের জন্য অনেক পাওয়া।

লেখিকা নাজিয়া জাবীনের প্রথম বই ‘ছড়ার তালে মনটা দোলে’। বইটি ব্রেইলে প্রকাশ পায় ২০০৯ সালে তারপর থেকে বর্তমানে ব্রেইলে প্রকাশ পাওয়া বইয়ের সংখ্যা ৩৭টি। এর মধ্যে আছে মোঃ জাফর ইকবাল, হানিফ সংকেত, ফরিদুর রেজা সাগর, মুস্তফা জব্বারসহ আরো অনেক লেখকের বই।

নাজিয়া জাবীন বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সাহিত্য-কবিতা পড়তে ভালোবাসে। নতুন বই পেলে তারা পাগলের মতো করে, কে কার আগে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন এগিয়ে আসে না? কেন বড় বড় প্রকাশকরা ব্রেইল প্রদ্ধতিতে বই প্রকাশ করছেনা? তারা টাকার দিকে না তাকিয়ে মানবিক দিকে তাকালেই তো হয়? তিনি জানান, তার ইচ্ছা সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলের পাঠাগার করবেন।

(এইচআর/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬)