শরীয়তপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘ ১৩ বছর পর বহুল প্রতীক্ষিত শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদারকে সভাপতি ও অনল কুমার দে’কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে । কমিটির বাকি ৬৯টি পদ পরবর্তিতে পূরণ করা হবে বলে জানান সৈয়দ আশরাফ।

১৩ বছর পরে সম্মেলন হলেও অত্যন্ত উৎসবমূখর পরিবেশে জেলা শহরের ধানুকায় অবস্থিত শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সম্মেলন। শনিবার দুপুর ১২টায় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশ্রাফুল ইসলাম এম.পি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দুটি হেলিকপ্টার যোগে বেলা সাড়ে ১১টার সময় শরীয়তপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে অবতরণ করেন। সেখান থেকে মোটর শোভাযাত্রা বহর নিয়ে তাদের সভাস্থল স্টেডিয়ম মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সির সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের উপ-নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি,এম মোজাম্মেল হক এম.পি, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম এম.পি, আব্দুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল ফারুখ খান এম.পি, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ডাবলু, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এনামূল হক শামিম, এস.এম কামাল হোসেন, সাবেক ডেপুটি স্পীকার শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ কর্নেল শওকত আলী, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ এ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইকবাল হোসেন অপু প্রমুখ। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন আওয়ামীলীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এম.পি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু অনল কুমার দে। ২০০৩ সালের ১১ জুলাই শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়েছিল।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া আর কোন দিন বাংলাদেশে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখতে পারব না। কারন, তিনি বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনের আগেই নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে এই প্রথম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। আপনারা বিগত উপজেলা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে পৌরসভাতে জয়লাভ করেছেন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চলছে, এখানেও শেখ হাসিনা যাকে নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে দলের সকল নেতা-কর্মী কাজ করে বিজয় ছিনিয়ে আনবেন।

মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশর মানুষ যখন গ্রামেই বসেই সুচিকিৎসা পাচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই সরকারের বিরুদ্ধে আবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে ৭১ এর পরাজিত শক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে আজ রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব নেতারা আজ বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। হানিফ আরো বলেন, প্রবাদ আছে- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।

তারা সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেই অশুভ শক্তি একত্র হয়ে শেখ হাসনার উন্নয়ন চিত্র ম্লান করে দেয়া চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। আর এই চক্রান্তের সাথে যোগ দিয়েছে ১/১১ এর কুশিলবেরা । ১/১১’র কশিলব মাহফুজ আনামদের মুখোশ আজ উম্মোচিত হয়েছে। মাহফুজ আনাম ওই সময় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে আমাদের প্রান প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার চরিত্র হনন করেছিলেন। মাহফুজ আনামের মিথ্যে সংবাদের উপর ভিত্তি করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার ফলে ১১টি মাস তাকে কারা প্রকোষ্ঠের নির্জন প্রহরে কাটাতে হয়েছিল। আজকে মাহফুজ আনাম স্বীকার করেছেন ওই সময় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা তার উচিৎ হয় নাই। আজ তিনি যতই ভুল স্বীকারই করুক না কেন এই ষড়যন্ত্রের কারনে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।

উদ্বোধকের বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম উষ্মা প্রকাশ করেন বলেন, ১৩ বছর পর এই জেলার সম্মেলন হচ্ছে। এটা ঠিক না। তিন বছরের মাথায় যদি সম্মেলন হতো, তাহলে এতদিনে অনেক নেতৃত্বের সৃষ্টি হতো। আমরা অনেক নেতা তৈরী করতে পারতাম। সময়মত সম্মেলন করে কমিটি গঠন করলে সংগঠন অনেক শক্তিশালী হয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে আমি যখন ছাত্রলীগ করতাম তখন দেখেছি ঠিক সময় মতই আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতো। তিনি শরীয়তপুরের আওয়ামীলীগের নেতাদের অনুরোধ করে বলেন, আগামী তিন বছর পরেই আপনারা সঠিক সময় সম্মেলন করবেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী আমাদের সহায়তা করেছে। এ কথা আজ অনেকে স্বীকার করতে চায়না। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী হয়ে আছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সচেতন ও স্বক্রীয় থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, এখনো স্বাধীনতার শত্রুরা তৎপর রয়েছে। তারা আমাদের স্বাধীনতাকে নশ্বাত করতে চায়। স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সংঘবব্ধ হতে হবে। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য আমরা সাবধান থাকবো। তিনি বলেন, আমরা নৌকা বাইয়া নিয়া যাবো, নৌকা চলবে, নৌকা কেউ প্রতিরোধ করতে পাবেনা।

নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা বিগত ৬০ এর দশক থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। ৮০’র দশকের প্রথমভাগে তিনি জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ ৫ বছর। ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমান কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেন।

অনল কুমার দে তার ৪৩ বছরের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৬ সাল থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ইতিপূর্বে এক মেয়াদে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি সফলতার সাথে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পুনরায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে নব-নির্বাচিত নেতাদ্বয় শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে এলে নেতা-কমীদের ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তারা। এসময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু, জেলার সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মির্জা হযরত আলী, নড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম ইসমাইল হক, শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি হুমায়ুন মোল্যাসহ যুবলীগ ও ছাাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

(কেএনআই/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬)