স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : পর্তুগালের তারকা উইঙ্গার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোল মেশিন লিওনেল মেসিকে পিছনে ফেলে ২০১৩ সালের ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। রিয়ালের পক্ষে বছরজুড়ে দূর্দান্ত খেলা এই তারকাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের প্রত্যাশাও অনেক। আসন্ন ব্রাজিল বিশ্বকাপে সাফল্য নির্ভর করছে রোনাল্ডোর ওপরেই। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা।

বিশ্বকাপে সবসময়ই পর্তুগালকে ডার্ক হর্স হিসেবেই বিবেচনা করা হয়, আর সেটাও অনেকটা রোনাল্ডোর কারনেই। ১৯৫৬ সালে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক ইউরোপের বর্ষসেরা খেলোয়াড়কে ব্যালন ডি’অর প্রদানের মাধ্যমে এই পুরস্কারের যাত্রা শুরু পরবর্তীতে যা ফিফা নিজেদের করে নেয় এবং তখন থেকেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে এই পুরস্কার প্রদান করার রীতি চালু হয়।

এখন পর্যন্ত ফিফা প্রদত্ত যে ১৪জন খেলোয়াড়কে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে তাদের মধ্যে কেউই বিশ্বকাপের বছরে নিজ দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ক্রীড়া আসরে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিতে পারেনি। তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী খেলোয়াড় পেলে ও আর্জেন্টাইর তারকা দিয়েগো ম্যারাডোনা তাদের সময়ে কখনো ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি।

চারবারের রেকর্ড ব্যালন ডি’অর জয়ী বার্সেলোনার তারকা লিওনেল মেসি ২০০৯ সালে প্রথম এই খেতাব জয় করেছিলেন। কিন্তু তারপরের বছর ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান বিশ্বকাপে তার দল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় এবং মেসি পুরো বিশ্বকাপে একটিও গোল করতে পারেননি। শেষ আটে তার দল জার্মানীর কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নেয়।

এটা সাম্প্রতীক ঘটনা হলেও ১৯৫৭ সাল থেকেই মূলত এই ইতিহাস শুরু। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা কখনই বিশ্বকাপে নিজের দেশকে প্রত্যাশানুযায়ী কিছু দিতে পারেনি। ১৯৫৭ সালে ব্যালন ডি’অর জয়ী রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তী আলফ্রেডো ডি স্টিফানো প্রথমে তার নিজ দেশ কলোম্বিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করলেও পরবর্তীতে তিনি স্পেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন। কিন্তু ১৯৫৮ সালে স্পেন বাছাইপর্বের বাঁধা পেরুতে ব্যর্থ হলে ফুটবলের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়ের কোন বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ ছাড়াই ক্যারিয়ারকে বিদায় জানাতে হয়। একইভাবে ড্যানিশ স্ট্রাইকার এ্যালান সিমোনসেনও ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। ব্যালন ডি’অর বিজয়ী মাত্র পাঁচজন খেলোয়াড়ের দেশ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

তবে আবার অন্যধরনের ইতিহাসও রয়েছে। ইতালিয় তারকা রবার্তো ব্যাজিওর মত দু:খজনক পরিনতি হয়ত অন্যকোন সেরা খেলোয়াড়ের ভাগ্যে ঘটেনি। ৯৪’র যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপে নক আউট পর্বে পাঁচটি গোলসহ সেমিফাইনালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে দুই গোল করে আজ্জুরিদের ফাইনালে উঠাতে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন ব্যাজিও। ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ১২০ মিনিট গোলশুন্য ড্র থাকার পরে শ্যুট আউটে জুভেন্টাসের এই ফরোয়াডের পেনাল্টি মিসের সুযোগে ব্রাজিল চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা নিশ্চিত করে। ১৯৭৪ সালে ইয়োহান ক্রইফের কারনে নেদারল্যান্ড, ১৯৭০ সালে ইতালির গিয়ানা রিভেরা, ১৯৮২ সালে পশ্চিম জার্মানীর স্ট্রাইকার কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগে এবং ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রোনাল্ডোর দল বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হয়।

(ওএস/পি/জুন০২,২০১৪)