গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর ক্যাথলিক গীর্জায় বোমা হামলা ট্র্যাজেডির ১৪তম দিবস। ২০০১ সালের এই দিনে ভয়াবহ বোমা হামলায় গীর্জায় সাপ্তাহিক প্রার্থনারত খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ১০ জন নিহতসহ আরো অর্ধশত আহত হন। দিবসটি পালন উপলক্ষে গীর্জার পক্ষে থেকে নিহতদের সমাধীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রার্থনা সভা, শোক র‌্যালীসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে।

বোমা বিস্ফোরণের দিন রাতে গীর্জার তৎকালীন ফাদার পিতাঞ্জা মিম্মো হত্যা ও গীর্জার সম্পাদক পিটার বৈরাগী বাদী হয়ে বিষ্ফোরক আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু, আইনী জটিলতায় দীর্ঘ ১৩ বছরে বিচার কাজতো দূরে থাক, অভিযোগই(চার্জশীট) গঠন করতে পারেনি পুলিশ। বরং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে ১৪ বার।

গোপালগঞ্জ সিআইডি সূত্রে জানাগেছে, এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে হত্যা মামলায় ১৮ ও বিষ্ফোরক মামলায় ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে। এদের মধ্যে মাদারীপুরের টেকেরহাটের বাসুদেব সাহা (২৩) ও একই জেলার রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের লিয়াকত শেখ (৪২) উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে। তবে, এ দুইটি মামলার প্রধান আসামী হরকত-উল-জেহাদ নেতা (হুজি) মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি, হুজির সাংগঠনিক সম্পাদক খুলনার রূপসার মাওলানা শেখ ফরিদ ও হুজির সামরিক কমান্ডার মাদারীপুরের রাজৈরের মাওলানা আ. রউফসহ অন্যান্য আসামীদের তিন দফায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয়া হয়।

কিন্তু, কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি সিআইডি। তবে, গত ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ভারতের দিল্লি থেকে পুলিশ ২ কেজি আরডিএক্স বিস্ফোরক ও দুইটি পিস্তলসহ দুই যমজ ভাই আনিসুর মুরসালিন (২৩) ও মহিবুল মুত্তাকিনকে (২৩) গ্রেফতার করে। এদের বাড়ি ফরিদপুর শহরে এবং দুই জন মাদ্রাসার ছাত্র। দিল্লির একটি আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বোমা বহন ও বিস্ফোরণের কথা স্বীকার করে। ওই আদালত তাদের ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়।

ধারণা করা হচ্ছে, এরা দুই জন গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গীর্জায় বোমা বহন এবং বিস্ফোরণ ঘটানোর সাথে জড়িত। তাদের সাজাভোগের মেয়াদ শেষে দেশে ফেরত আনার পর হত্যা মামলার চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ৩ জুন সকাল ৭টার দিকে মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর ক্যাথলিক গীর্জায় সাপ্তাহিক প্রাথর্না চলছিল। প্রার্থনা চলার কিছু সময় পর হঠাৎ করে বিকট শব্দে বোমা বিষ্ফোরিত হয়। এ সময় মুহুর্তের মধ্যে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। প্রার্থনারতরা দিক-বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ঘটনাস্থলে প্রাথর্নারত ১০ জন নিহত হন। আহত হন আরো অর্ধশত লোক। সেদিন বোমা হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন তারা হলেন- রক্সিড জেত্রা, বিনোদ দাস, মন্মথ সিকদার, সঞ্জীবন বাড়ৈ, পিটার সাহা, অমর বিশ্বাস, সতীশ বিশ্বাস, ঝিন্টু মন্ডল, মাইকেল মল্লিক ও সুমন হালদার। এর মধ্যে ৭ জনই হলো মা-বাবার একমাত্র সন্তান।

নিহত সুমন হালদারের বাবা সূখরঞ্জন হালদার ক্ষোভের সাথে বলেন, এ বোমা হামলার ঘটনায় আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি। কিন্তু, দীর্ঘ ১৩ বছর পার হলেও সন্তান হত্যার বিচার পাইনি। কবে পাবো তাইও জানিনা। হত্যাকারীদের বিচার দেখতে পাবো- এ আশায় এখনো বেঁচে আছি। শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের সন্তান হত্যার বিচার করেন।

বানিয়ারচর ক্যাথলিক গীর্জার প্রতিনিধি রকিম বৈরাগী বলেন, বোমা হামলায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় গীর্জায় নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। এরমধ্যে সকাল ৭টায় নিহতদের স্মরণে প্রার্থনা সভা ও সমাধীতে মঙ্গল জল ও ফুল ছিটানো হবে। পরে সন্ধ্যায় শোক র‌্যালী বের হবে এবং কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।

(এমএইচএম/জেএ/জুন ০৩, ২০১৪)