প্রবীর সিকদার


আমি আমার মতো করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছি। অবশ্য সেই ধারা বড় ক্ষীণ। প্রভাবশালী বা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধররা এর কোনও খবর রাখেন না। যদিও বা কেউ রাখেন, তাদের ভাবনাটি এমন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করছে, প্রবীর সিকদারও সেই ব্যবসাতেই নেমেছে।

যারা আমাকে খুব কাছে থেকে জানেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার কাজ নিয়ে আমি যাদের মুখোমুখি হয়েছি, সেই সব সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক খবরটি আছে, প্রবীর সিকদার কতোটা ধান্ধাবাজ ব্যবসায়ী কিংবা তার অন্তরের দায়বদ্ধতা কতোটা ! এখন আমি এতোটাই কঠিন হয়ে গেছি, আমাকে কেউ ধান্ধাবাজ বললেও কষ্ট পাই না, আবার খুব প্রশংসা করলেও পুলক বোধ করি না।

কয়েকদিন আগে আমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের কানাইপুরে আমার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম জরুরি কিছু কাজে। আমার যৌবনের টানা ১৭ বছর ওই প্রতিষ্ঠানের পেছনে ব্যয় করেছি। এখনো ওই প্রতিষ্ঠানটি আমার সন্তানের চেয়েও বড়।

ওই দিনই বিদ্যালয়টির শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে ওই বিদ্যালয় ও আমার সাম্প্রতিক নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ কথা হচ্ছিল। আমার স্নেহভাজন এক ছাত্র ও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক খুব যন্ত্রণা ও ক্ষোভের সাথেই আমার সাম্প্রতিক গ্রেফতার, নির্যাতন আর কারাভোগের প্রসঙ্গ তুলে বলল, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে এই তো আপনার প্রাপ্তি ! সারাজীবন কষ্ট করে স্কুল বানিয়ে গেছেন, আর আমরা বসে বসে খাচ্ছি ! আপনাকে কি আমরা যোগ্য সম্মান করতে পারছি!' কথাটা বলতে বলতে আমার ছাত্রটির চোখে জল দেখা গেল। মুহূর্তে পরিবেশ ভারি হয়ে যাওয়ায় কিছু সময় কাটল নিরবেই।

কিছু সময় পর নিরবতা ভাঙলাম আমি নিজেই। বললাম, আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারি মাত্র। আমার আর কোনও যোগ্যতা নেই। যে দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করে 'নাজাত দিবস' পালন করে, সেই দেশে কাজ করে যাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু চাইবার অধিকার কিংবা রুচি নেই। আবার নিরবতা। তারপর নিরবতা ভাঙল আড্ডা শেষের গম্ভীর বাতাসে।