পীরগঞ্জ (রংপুর)প্রতিনিধি :মুুজিব নগরের কর্মচারী পীরগঞ্জের সাব-রেজিষ্ট্রার মিজানুর রহমান। এর আগে তিনি বিআরডিবি তে চাকরীতে ছিলেন। সাব রেজিস্ট্র্রিার হিসেবে এখানে তিনি যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অলিখিত খরচ বৃৃদ্ধি করেছেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারী ফি’র চেয়ে বেসরকারী ফি,ই বেশী নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দলিল সম্পাদনে সিটিজেন চার্টার (নাগরিকদের জন্য সরকারী মুল্য তালিকা) ঝুলানো থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

এখানে সাব-রেজিষ্ট্রার-দলিল লেখক সমিতি ও দলিল লেখকদের সমন্বয়ে ত্রি-মুখী সিন্ডিকেট করে উৎকোচ গ্রহনের মহোৎসব চলছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা উৎকোচের প্রতিবাদ করলে হয়রানির মাঝে ফেলেও অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের জমি কেনা-বেচায় দলিল সম্পাদনের জন্য উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে আসতে হয়। এখানে চলতি বছরের জানুয়ারীতে ১ হাজার ৬টি, ফেব্র“য়ারীতে ৯’শ ৫২টি এবং মার্চে ৫’শ ৮২টি (২১ মার্চ পর্যন্ত) দলিল সম্পাদন হয়েছে। কবলা, হেবাবিল এওয়াজ, দানপত্র, হেবা ঘোষনা দলিল রেজিষ্ট্রি অফিসে সম্পাদন হয়ে থাকে। সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনে এসে জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা নানান হয়রানির শিকার হচ্ছে। কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে সরল প্রকৃতির মানুষের কাছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাব রেজিষ্ট্রার, দলিল লেখক সমিতি ও দলিল লেখকরা। কোন অভিযোগেও কাজ হয় না। কারণ শক্তিশালী সমিতির কাছে সাধারণ মানুষ অসহায়।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিটি কবলা দলিলে প্রদর্শিত মোট মুল্যের উপর ষ্ট্যাম্প ৩ শতাংশ, রেজিঃ ফি (এ ফিস) ২ শতাংশ, পৌর কর (উপজেলার ১ টাকা ও পৌরসভার ২ টাকা) ৩ শতাংশ, উৎস্য কর ১ শতাংশ (পৌরসভায় জমি হলে আরও ১ শতাংশ করে টাকা), এন ফিস- ১’শ ৬০ টাকা, ই ফিস- ১’শ টাকা করে মোট মুল্যের প্রায় ৯ শতাংশ করে টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয়। অপরদিকে প্রতি দলিলে কমপক্ষে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা কিংবা তারও বেশী অদৃশ্য খরচ থাকে। ওই অদৃশ্য খরচ সাব রেজিষ্ট্রার ও দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দের মাঝে ভাগাভাগি করে নেয়া হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখকরা জানায়। এ ছাড়াও কবলা দলিলে শুভংকরের ফাঁকিও রয়েছে।

ক্রেতাকে সঠিক হিসাব না দেয়ায় মোটা অংকের টাকা গুনতে বাধ্য হচ্ছে সাধারন মানুষ। দলিল লেখক সমিতি প্রতি দলিলের জন্য হলফনামা- ১ হাজার টাকা, সমিতির নির্দিষ্ট চাঁদা সাড়ে ৪ হাজার টাকা, সাব রেজিষ্ট্রার- ৬’শ ৫০ টাকা, বিকেল ৫ টার পর প্রতি দলিলের লেট (বিলম্ব) ফি- ৫’শ টাকা, আঙ্গুলের ছাপ- ৫০ টাকা, হেড ক্লার্ক ৩’শ টাকা। এ ছাড়াও কাগজের ঝামেলা থাকলে মোটা টাকা দিলেই দলিল সম্পাদন হয়ে যায়। গত ১৬ মার্চে খারিজ ছাড়াই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খামার তাহিরপুরের আবুল হোসেন তার ৬ শতক জমি একই গ্রামের নওয়াব আলীর পুত্র শাহীনুর মিয়ার কাছে বিক্রি করেন। ওই দলিল (দেড় লাখ টাকার) সম্পাদনের জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ নেয়া হয়। দলিলটি সমিতির সাধারন সম্পাদক তৈয়বুর রহমান উত্তাল নিজেই সম্পাদন করেন বলে জানা যায়। এ ছাড়াও প্রতি দলিলে অদৃশ্য খরচ থাকায় অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখিত খরচ ছাড়িয়ে যায়। যা দেখে চোখ ছানাবড়া হয়। গত ১৩ মার্চে উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম মিয়ার পুত্র ওয়াহিদুল ইসলাম ১৫ লাখ টাকার একটি কবলা করেন। এতে সরকারী বিভিন্ন ফিস্, ষ্ট্যাম্প, পৌরসভার উৎস কর ও দলিল লেখকেরসহ (মোহরার) ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫’শ টাকা খরচ নেয়া হয়েছে। ওই দলিলে (দলিল নং- ২২৭৫) স্থানীয় সরকার কর ৪৫ হাজার টাকা ও ষ্ট্যাম্প ৪৫ হাজার টাকা, রেজিঃ ফি- ৩০ হাজার ২৬০ টাকা, উৎস্য কর ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৬০ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। ওই দলিলে সমিতি অতিরিক্ত ৩০ হাজার ২৪০ টাকা নিয়েছে। এ রকম ৮ মার্চে ৫ লাখ টাকার জমির সম্পাদিত দলিল নং-২১৮০ (দাতা- কাসাফুদ্দোজা), ১৬ মার্চে ১০ লাখ টাকার জমির সম্পাদিত দলিল নং-২৪২৮ (দাতা আব্দুস সাত্তার), ১০ লাখ টাকার জমির সম্পাদিত দলিল নং-২৪৪৫ (দাতা- জসিম উদ্দিন) কাছ থেকেও সমিতির নামে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়েছে। উল্লেখিত জমির ক্রেতাগণ অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান। পাশাপাশি ক্রেতাদেরকে দলিল সম্পাদনের খরচও যথাযথ দেয়া হয় না বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক তৈয়বুর রহমান উত্তাল জানান- সমিতির নির্ধারিত বিভিন্ন খাতে টাকা নেয়া হয়। কারণ এই টাকায় অনেক হিসাব রয়েছে। এ ছাড়াও এখানে ১’শ ৪০ জন দলিল লেখক রয়েছেন, তাদেরকেও এই সমিতি থেকে প্রতিদিন টাকা দিতে হয়।
একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে, সাব রেজিষ্ট্রার মিজানুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে মোটা অংকের

টাকা ঘুষ নিতে অফিস চলাকালে কয়েকদফা তার খাস কামরায় যান। কমিশন দলিল করতেও সাব রেজিষ্ট্রারের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা কিংবা ওয়ারিশরা। সাব রেজিষ্ট্রার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন- স্বচ্ছভাবে দায়িত্ব পালন করছি। বাড়তি টাকার ব্যাপারে প্রায়ই আমার কাছে দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করে। এটা (সমিতি) অনিবন্ধিত সংগঠন। তারা যেভাবে পারে, টাকা আদায় করে নেয়। তবে প্রতি দলিলে সরকারী খরচ মোট টাকার ৯ শতাংশ হারে সরকারী খাতে জমা হয়ে থাকে। এর অতিরিক্ত খরচ নিলে আমার কিছুই করার নেই। ওটা সমিতির ব্যাপার।




(জিকেবি/এস/মার্চ২৩,২০১৬)