লোহাগড়া (নড়াইল) থেকে রূপক মুখার্জি : নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভা এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নেই কোন ডাষ্টবিন। ডাষ্টবিনের অপ্রতুলতায় শহরের বাসা-বাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র রাস্তার ওপর স্তুপ অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রতিনিয়ত এসব ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে দুর্গন্ধময় আবর্জনার পাশ দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে পৌরবাসী। আর এই দৃশ্য পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০৩ সালে জোট সরকারের শাষনামলে পৌর সভা গঠন আইনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে স্রেফ ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ লোহাগড়া পৌরসভা স্থাপিত হয়। গ শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত এই পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে।

প্রায় ১৪.৮৭ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তনের লোহাগড়া পৌরসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পোষ্ট অফিস, থানা ভবন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ, দেশের অন্যতম শতাব্দী প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্মীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়, ঐতিহ্যবাহী রাম নারায়ন পাবলিক লাইব্রেরী, লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্মীপাশা মহিলা ডিগ্রী কলেজ, লোহাগড়া সরকারী কলেজ, বিনোদন কেন্দ্র নিরিবিলি পিকনিক স্পট, ৯টি সার্জিক্যাল ক্লিনিক, ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান, লক্ষ্মীপাশা-লোহাগড়া বাজারসহ আধাসরকারী অফিস সমুহ।

সাম্প্রতিক সময়ে এ শহরের আবাসিক এলাকা গুলোতে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। আবাসিক এলাকার বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নেই কোন ডাষ্টবিন। ফলে পৌর এলাকার জনগন তাদের বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা রাস্তার ওপর ফেলতে বাধ্য হয়। পৌরসভার ময়লা বহনকারী গাড়ি সপ্তাহের নিদিষ্ট দিনে স্তুপকৃত ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে থাকে।

সপ্তাহের বাকি দিন গুলোতে রাস্তার ওপর ময়লা আবর্জনা স্তুপ জমা হতে থাকে। আর এসব ময়লা আবর্জনার পাশ দিয়ে চলার সময় শহরবাসী মারাত্মক বিড়ম্বনায় পড়েন। ক্লিনিক গুলোর অপারেশন জনিত সার্জিক্যাল আবর্জনা ডাষ্টবিন না থাকায় রাস্তার পাশে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দূর্গন্ধে চার পাশের বাতাস ভারি হচ্ছে। পৌরসভার আবাসিক এলাকার রাস্তা গুলো নিয়মিত ঝাড়– দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হলেও দূরবর্তী এলাকার রাস্তা ঘাটের অবস্থা একেবারেই বেহাল। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা।

পৌর সভার সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ‘ইঞ্জিনিয়ার ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন’।

৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মোজান খাঁ বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে কোন ডাষ্টবিন নেই। ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ বুলবুল আহম্মদ বুলু বলেন, ‘পৌরসভার উদ্যোগে ডাষ্টবিন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও জায়গার অভাবে তা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

পৌরসভার সভার রামপুর এলাকার শ্রমিকলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিন্টু, কচুবাড়িয়া গ্রামের ফারুক হোসেন, গোপিনাথপুর গ্রামের রবিউল শেখ, বাবু, জাহিদ, লক্ষ্মীপাশা গ্রামের সোহাগ শেখ, লিটন রেজা, জয়পুর খোকন সরদার, লোহাগড়ার আনিস, মিলন, ছাতড়ার হিরাঙ্গীর, গোবিন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করে বলেন, পৌর মেয়র আমাদের কাছ থেকে পৌর ট্যাক্স ঠিকমতই নিচ্ছেন, কিন্তু তার প্রতিদানে আমাদের অসুবিধার দিকগুলো তিনি দেখছেন না।

লোহাগড়া পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট নেওয়াজ আহম্মদ ঠাকুর নজরুল বলেন, ‘শহরাঞ্চলে জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। জমি না পাওয়ায় ডাষ্টবিন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জমি পেলে দ্রুততার সাথে ডাষ্টবিন নির্মাণ করা হবে’। পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ন স্থানে ডাষ্টবিন নির্মাণ করে নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে পৌরবাসিকে দুর্গন্ধ মুক্ত পৌরসভা গড়ে উঠবে- এমন প্রত্যাশা পৌরবাসীর।

(আরএম/এএস/মার্চ ২৩, ২০১৬)