হাকিকুল ইসলাম খোকন : নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ হচ্ছে সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার না থাকা। নারীর নিজের আয়ের অর্থও নিজের মনে করতে পারে না। পিতৃতান্ত্রিকতার মনোভাবের উৎস সেখানে।

কাজেই সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে নারী আন্দোলন এর অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজ কাঠামো এমন এক ছাঁচের মধ্যে আটকে রয়েছে সেখান থেকে বের করে আনা যাচ্ছে না। সেজন্য আমাদের আরো জোরালো নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। খবর বাপসনিঊজ।

গত ২০ মার্চ রবিবার,বিকাল সাড়ে ৫টায় নিউইর্য়কের জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএ আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি উপরোক্ত বক্তব্য ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম এ কথা বলেন।

প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইঊএসএ সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম-এর সভাপতিত্ত্বে ও নারীনেত্রী নাজনীন মামুন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম ।বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিক রাখীদাস পুরকায়স্থ, জাতিসংঘে কর্মরত পলিসি অফিসার তাফতুন নাসরীন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটের নারী বিষয়ক সম্পাদিক সাংবাদিক সুমী খান। অনুষ্ঠানের শুরুতে ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইঊএসএ সাধারন সম্পাদক আলীম উদ্দিন।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএ কে ধন্যবাদ জানান নারী দিবস উপলক্ষে এধরনের নিয়মিত কর্মসূচী পালন করার জন্য। তিনি বলেন, নারী আন্দোলনের ইতিহাস দুইশত বছরের একটি ইতিহাস। ১৮১০ সালে শ্রমিকের মজুরীর আন্দোলন দিয়ে শুরু হওয়া নারী আন্দোলন শত বছর শেষে ১৯১০ সালে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন। আর ২০১৬ সালে এসে আরো শত বছর পর আমরা পেয়েছি নারীর অধিকার মানবাধিকার। এই টুকু পেতে আমাদের দুশো বছর সময় লেগেছে কাজেই সমান অধিকার পেতে আমাদের আরো কত সময় লাগবে সেটা আমরা এখনো জানি না। তিনি বলেন জাতিসংঘ ২০৩০ সালে এমন একটি সমাজ দেখতে চায় যেখানে নারী পুরুষ এর সমান অংশীদারিত্ত্ব থাকবে।তার মানে হচ্ছে পুরো মানবজাতিকে স্বপ্ন দেখতে হবে ২০৩০ সালে আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে নারী পুরুষে সমতা থাকবে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেই স্বপ্ন পুরনের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

দুনিয়াব্যাপি যে সংঘাত আর যুদ্ধ চলছে। আর সেখানে নারীদের অবস্থা খুবই করুন। তাদের যৌনদাসী বানানো হচ্ছে । তাহলে এই সংঘাত যুদ্ধ যদি বন্ধ না হয় তাহলে নারীর অগ্রগতি কিভাবে হবে। তাই নারী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ দুনিয়া ব্যাপি ধর্মের নামে,গণতন্ত্রের নামে যে সংঘাত চলছে তা বন্ধ করার আন্দোলন করতে হবে। মানব সভ্যতা যেখানে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধর্মের নামে একটি গোষ্ঠী সমাজটাকে দুনিয়াটাকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। দুনিয়াব্যাপি ধর্মীয় এই লেভাজদারী বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলাম, আফ্রিকায় বোকা হারাম, সিরিয়ায় আইএসআই এরা সবাই এক ও অভিন্ন। এদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

সভায় বিশেষ অতিথি রেখা পুরকায়স্থ বলেন, নারী আন্দোলন একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনের অংশ। নারী পুরুষ উভয়ের মিলিত সংগ্রাম। বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের অনেক অর্জন যেমন রয়েছে তেমনি আবার নতুন নতুন চ্যালেজœও সামনে আসছে। মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জাতিসংঘের পলিসি অফিসার তাফতুন নাসরীন বলেন,প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে নারীদের দমিয়ে রাখার যে সিন্ডকেট তাদের প্রতিরোধে সি-িকেট করতে হবে। তিনি বলেন, নারীরা এক একজন দশভূজা দূর্গা। নিজেদের অধিকার,মর্যাদা প্রতিষ্টার জন্য নারীর নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে-আমরাই পারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারী সুরক্ষা আইন পৃথিবী শ্রেষ্ট। কিন্তু এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। অপব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তিনি ইভ টিজিং প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, ইভ টিজিং একটি মেয়ের মবিলিটি নষ্ট করে।

গণমাধ্যমকর্মী সুমী খান বলেন, বাংলাদেশের গণ মাধ্যমে এখনো নারী পুরুষ বৈষম্য আছে। পেশাগত যোগ্যতা প্রমান করতে গিয়ে নারী সাংবাদিকদের নিউজ রুমের এজেন্টরা প্রতিহত করে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা পুরুষ ছাড়া সম্ভব নয়। বিশ্বাস করি আগামী দিনে নারী পুরুষ সমভাবে সমঅধিকারে এগিয়ে যাবে।অনুষ্ঠানের অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে ওবায়দুল্লাহ মামুন, মোঃ হারুন, গোলাম মর্তুজা,জাকির হোসেন বাচ্চু। অনুষ্ঠানে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মোঃ হারুন নারী দিবস উপলক্ষ্যে একটি লিখিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আবৃত্তি শিল্পী গোপন সাহার উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখা। আরো সংগীত পরিবেশন করে সংগীত শিল্পী দিপু সাকলান চৌধুরী,তাহমিনা শহীদ, শহীদ উদ্দিন। নারী অধিকার ভিত্তিক কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তি শিল্পী মুমু আনসারী, সুবক্তগীন সাকী, শুক্লা রায়, মিজানুর রহমান বিপ্লব, পারভিন সুলতানা, মিহির আশরাফ, তৈইমুর ও আবীর আলমগীর।

(ওএস/এএস/মার্চ ২৩, ২০১৬)