স্পোর্টস ডেস্ক : দলের চূড়ান্ত সাফল্য বলতে দুবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়। সেটিও প্রায় তিন দশক আগের কথা। তারপরও বিশ্বব্যাপী ফুটবল উন্মাদনায় বেশি আলোচিত দলগুলোর তালিকায় আর্জেন্টিনা থাকছেই। ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি হয়তো দলে নেই, তাতে কি, মেসির মতো ফুটবল জাদুকর তো আছে। ফুটবল বিশ্বে যিনি খ্যাতি পেয়েছেন গোল মেশিন হিসেবে।

বলা যায় মেসিকে ঘিরে আর্জেন্টিনা দল নিয়ে বিশ্বকাপে একটা বাড়তি উন্মাদনা থাকছেই। তার ওপর দলের নেতৃত্বেই থাকছেন বার্সেলোনার এই সুপারস্টার স্ট্রাইকার। বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে এখনও কোয়ার্টারের গণ্ডি পার করতে পারেননি। তার আগেই সময়ের সেরা তারকার খ্যাতি পেয়েছেন। টানা চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যরকম উচ্চতায়। তবে বিশ্বকাপ জয়ের অপূর্ণতাটা এখনও থাকছে তার নামের পাশে। সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর দারুণ এক সুযোগ এবার। ব্রাজিলে হচ্ছে বিশ্বকাপ। পরিবেশটা ইউরোপের ফেভারিট দলগুলোর চেয়ে বেশি চেনা। তাই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর ঘরে নিজেকে সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মিশন মেসির। তাকে অধিনায়ক করে এবারও ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছেন কোচ আলেসান্দ্রে সাবেলা। তবে ঘোষিত দলে জায়গা হয়নি এভার বানেগার। ২৬ সদস্যের প্রাথমিক দল থেকে সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে তিনিই বাদ পড়েন।

ভ্যালেন্সিয়ায় ২০০৮ সাল থেকে আছেন ২৫ বছর বয়সী বানেগা। যেখান থেকে ধারে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে খেলেছেন এক মৌসুম। চলতি মৌসুমে ধারে খেলছেন নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলেও ২০০৮ সাল থেকে খেলছেন এই মিডফিল্ডার। এ পর্যন্ত ২৪ ম্যাচে খেলে গোলও পেয়েছেন দুটি। সাবেলা তার প্রাথমিক দল থেকে যাদের বাদ দিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বানেগাই। তার সঙ্গে আরও দুজন চূড়ান্ত দলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই দুজন হলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জোসে সোসা এবং অ্যাটলেটিকো মিনেইরোর নিকোলাস ওতামেন্ডি। ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দল থেকে আগেই চারজন কমিয়ে কাজ এগিয়ে রেখেছিলেন সাবেলা। তখন বাদ পড়েছিলেন ফ্রাঙ্কো ডি সান্তো, লিজেন্দ্রো লোপেজ, গ্যাব্রিয়েল মার্কাডো এবং ফ্যাবেইন রিনাওডো। প্রাথমিক দল ঘোষণার সময়ও সেরাদের মধ্যে দুজন বাদ পড়েন। তারা হলেন টটেনহ্যামের এরিক লামেলা এবং জুভেন্টাস স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজ। শেষ গ্রীষ্মের দলবদলে ২৬ মিলিয়ন পাউন্ডে রোমা থেকে টটেনহ্যাম যান লামেলা। কিন্তু ইনজুরির কারণে মৌসুমের শুরুতেই ১০টি ম্যাচ খেলতে পারেননি। অপরদিকে সিরি আ’তে ১৯ গোল করা তেভেজকে বিবেচনায় নেননি সাবেলা।

বিশ্বকাপে এবার গ্রুপপর্বে অনেকটা সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই লড়তে হবে আর্জেন্টিনাকে। গ্রুপে মেসির দল বাদে সেভাবে ফেভারিট কোনো দল নেই। ড্রতে এফ-গ্রুপে স্থান হয়েছে মেসিদের। যেখানে তাদের তিন প্রতিপক্ষ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ইরান ও নাইজেরিয়া। ১৫ জুন বসনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু করবে দুবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এরপর ২১ জুন ইরান ও ২৫ জুন নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হবে মেসি শিবির।

১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে দুবার বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। এর বাইরে ১৯৩০ ও ১৯৯০ সালে ফাইনালে গেলেও শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়। শেষ দুটি আসরে আর্জেন্টিনার সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনাল। এর মধ্যে শেষ আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে নাকানি-চুবানি খেয়ে বিদায় নেয়। জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে হেরে মেসি-অ্যাগুয়েরোদের থামতে হয়। ২০০৬ সালে সেই জার্মানির কাছেই কোয়ার্টারে হেরেছিলেন তারা। সেবার অবশ্য লড়াই করলেও পেনাল্টি গোলে হার মানতে হয় ইউরোপের দলটির কাছে। এবার অনেকটা চেনা পরিবেশে খেলা। তাই ইউরোপের দলগুলো থেকে এগিয়েই থাকার কথা আর্জেন্টিনার। হিসাবের খাতা যাই বলুক, মেসিকে বিশ্বকাপ জয়ের তকমা পড়তে হলে মাঠেই তার প্রমাণ দিতে হবে।

আর্জেন্টিনার চূড়ান্ত দল

গোলরক্ষক: রোমেরিও, আন্দুজার, ওরিয়ন। ডিফেন্ডার: জাবালেতা, ফার্নান্দেজ, গারাই, রোজো, ক্যাম্পগানারো, দেমিচেলিস, বাসান্তা। মিডফিল্ডার: মাশ্চারেনো, গাগো, বিগলিয়া, আলভারেজ, অগাস্টো, ডি মারিয়া, রদ্রিগেজ, পেরেজ। ফরোয়ার্ড: মেসি, হিগুয়েন, অ্যাগুয়েরো, পালাসিও, লাভেজ্জি।

(ওএস/এইচআর/জুন ০৪, ২০১৪)