টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

টাঙ্গাইল সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম বুধবার দুপুরে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

আসামিরা হলেন, সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সানিয়াত খান বাপ্পা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চাঁন মিয়া, নুরু, সানোয়ার হোসেন ও বাবু। অভিযুক্তরা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। এছাড়া মামলার অপর আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, ফরিদ মিয়া, সমির টাঙ্গাইল জেল হাজতে রয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজ পাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১১ অগাস্ট শহরের বেবি স্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামে আরো একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গত বছরের ২৪ অগাস্ট গ্রেফতার করে।

তারা দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান কাঁকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত।

পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা জানান, ঘটনার দিন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা তাকে (রাজাকে) দায়িত্ব দেন ফারুক আহমদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজ পাড়ায় তার একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে আনার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার সময় পথেই রাজার সঙ্গে ফারুক আহমদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিক্সা ছেড়ে ফারুক আহমদের রিক্সায় উঠেন এবং তাকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান।

পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে ফারুক আহমদের সঙ্গে কথা হয় রানার। একপর্যায়ে ফারুক আহমেদকে ওই পদে প্রার্থী না হওয়ার অনুরোধ করেন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান। ফারুক আহমদ এতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে ফারুক আহমেদ সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। এ রময় অন্যরা তার মুখ চেপে ধরেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানকার রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিক্সায় ফারুক আহমদের মরদেহ নিয়ে আসামী রাজাসহ দু’জন দু’পাশে বসেন এবং ফারুক আহমদের বাসার কাছে ফেলে রেখে আসেন।

এ ঘটনায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ ১৪জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ০৬, ২০১৬)