সিলেট প্রতিনিধি : চোখের সামনে নিজের কষ্টার্জিত সোনালী ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি এর চেয়ে বড় কষ্ট আর নেই। তাই শিশু সন্তানকে নিয়েই চেষ্টা করছি পানি থেকে ধান কাটার। বুধবার সিলেটের বালাগঞ্জের বানাইয়া হাওরপাড়ের জলমগ্ন জমিতে ধান তোলার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার সময় দুঃখভরা কন্ঠে এমন কষ্টের কথা জানান কৃষক আদম আলী।

তিনি বলেন, অনেক ধার দেনা করে ২০ কেদার জমি বর্গাচাষ করেছি। গৃহস্থকে ধান দিয়ে সারা বছরের আহার জোগাড়ের সোনালী স্বপ্ন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান কাটতে পারছি না। তাই রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নাজির নগরের কৃষক রহিম আলী বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না।

শুধু আদম আলী বা রহিম আলী নয়। গত দুইদিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের হাজার হাজার কৃষকের সোনালী ধান তোলার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় হাজারো হেক্টর বোরো ফসল ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। সিলেটে সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হয় প্রবল বর্ষণ, এ ছাড়া বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটে বেশ কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সিলেট আবহাওয়া অফিস মঙ্গলবার ৯ ঘন্টায় ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের এ পরিমাণ গত ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে এ বছর বোরো ধান আবাদ করা হয় ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৭৯ হাজার ৫৪৫ হেক্টর, মৌলভীবাজার জেলায় ৫২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর, হবিগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ২০ হেক্টর ও সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ২০ হাজার ৮০৫ হেক্টর।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ চন্দ্র হোড় বলেন, বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি না থামলে বোরো ফসলের আরো অনেক ক্ষতি হবে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে এসব জমির পানি নেমে যাবে এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

(ইউডি/এএস/এপ্রিল ০৭, ২০১৬)