মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার পশ্চিম রাজৈর গ্রামের এক ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী বখাটের ভয়ে স্কুল যেতে ভয় পায়। গত এক মাস ধরে উক্তক্ত্যের পর বুধবার স্কুল যাবার পথে ঐ ছাত্রীকে অপহরণ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। এই ঘটনায় থানায় ঐ ছাত্রীর পরিবার থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ দেয়ার পর থেকে উল্টো তাদের হুমকিসহ মীমাংসা করে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে পারিবারিকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয়, পরিবার ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মাচারং ব্র্যাক স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে স্কুলে আসা-যাবার পথে গত প্রায় এক মাস ধরে একই গ্রামের শওকত আলী ফকিরের বখাটে ছেলে ফার্নিচার মিস্ত্রি ইব্রাহিম ফকির (১৯) উত্তক্ত্য করে আসছিলো। এই ঘটনায় কয়েকবার বখাটের পরিবারকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এরই জের ধরে বুধবার সকালে ঐ ছাত্রী স্কুলে যাবার পথে বাধা দেয় ইব্রাহিম ও তার দুই বন্ধু একই গ্রামের আবুল হোসেন ফকিরের ছেলে মুছা ফকির (১৮) ও আনোয়ার ফকিরের ছেলে জাহিদ ফকির (১৮)।

পরে ঐ তিন বখাটে অপহরণের উদ্দেশ্যে স্কুলের ক্লাস রুম থেকে জোর করে ঐ ছাত্রীকে টেনে হিঁচড়ে স্কুলের পাশে রাস্তায় নিয়ে আসে।

এসময় স্কুলের ছাত্রীদের বাধার মুখে ও তাদের চিৎকার শুনে শিক্ষকসহ স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে ঐ তিন বখাটে পালিয়ে যায়। এসময় ঐ ছাত্রী হাতে প্রচন্ড আঘাত পায়।

এই ঘটনার পর ছাত্রীর পরিবার থেকে থানায় অভিযোগ করা হলে ঐ দিন রাতেই বখাটের পরিবারের লোকজন ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে উল্টো হুমকি দেয়। এই ঘটনার পর থেকে ঐ ছাত্রী স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। আর তার পরিবার দুই মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির মুখে আছে। তারা দ্রুত এর বিচার চায়।

এ ব্যাপারে ছাত্রীর বাবা বলেন, ঐ বখাটে ইব্রাহিমের পরিবার গ্রামে প্রভাবশালী হওয়ায় আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় আছি। ওরা অপরাধ করেও আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি। ওদের সঠিক বিচার না হলে হয়তো আমার মেয়েদের পড়াশুনা বন্ধ করে ঘরে বসে রাখতে হবে।

ঐ ছাত্রী বলেন, অনেক দিন ধরে ওরা আমাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো। ওদের জন্য আমি স্কুলে যেতে ভয় পেতাম। কিন্তু মা-বাবা আমাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতেন। বুধবারে এই ঘটনার পর এখন স্কুলে যেতে ভীষণ ভয় পাই। ওর শাস্তি না হলে আরো সাহস বেড়ে যাবে। এতে করে আমরা আরো বেশি বিপদে পড়বো। হয়তো আমার পড়াশুনাই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আপনারা সবাই মিলে দেখবেন যেন আমি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর নারী উন্নয়ন সংস্থা নকশি কাথার নির্বাহী পরিচালক আয়শা সিদ্দিকা বলেন, এই ঘটনার পর রাজৈর থেকে ঐ ছাত্রী আর ছাত্রীর বাবা আমার অফিসে এসেছিলেন। তাদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনে রাজৈর থানার ওসি ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলেছি। তারা দ্রুত এর সমাধান দিবেন। ঐ ছাত্রী নিদ্বিধায় যেন স্কুলে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিবে।

তাছাড়া যেহেতু স্কুলটি ব্র্যাকের তাই মাদারীপুর ব্র্যাক প্রতিনিধি ফজলুল হকের সাথে কথা বলেছি। তারাও বখাটেদের গ্রেফতারসহ সঠিক বিচারের দাবীতে মানবববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন।

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, আমি আগামী ২০ এপ্রিল ঘটনাস্থলে গিয়ে ঐ মেয়ের ব্যাপারে সব ধরণের পদক্ষেপ নিবো। তাছাড়া রাজৈর ওসি এর সাথে কথা বলেছি। তিনি আইনগত সব ধরণের সহযোগিতা করবেন।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন ভূইয়া বলেন, ঘটনার কথা আমি জানি। ইতিমধ্যে অভিযুক্তকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আশা করছি ঐ ছাত্রী স্কুলে যেতে কোন সমস্যা হবেনা।

(এএসএ/এএস/এপ্রিল ১৫, ২০১৬)