প্রবীর সিকদার : নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ সুখ ও শান্তির কথা ভাবেন না কোন্ বাবা মা! সন্তান যেন ভালো মতো পড়াশোনা করে, ভালো স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সৎ ভাবে বেড়ে ওঠে, সৎ কর্মজীবনে সুখে শান্তিতে থাকে... আরও কতো কি ভাবনা সন্তানকে ঘিরে আবর্তিত হয় বাবা মায়ের মনে!

বাবা মায়ের এই যে ভাবনা তা কী এখন শুধুই স্মৃতি; অতীত ভাবনা! হয়তো কিংবা আসলেও তাই! সৎ ভাবে বেড়ে ওঠা মানেই সাহসী হওয়া। কেননা একজন মানুষ সৎ না হলে তার পক্ষে সাহসী হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর সাহস না থাকলে প্রতিবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু সৎ চিন্তা আর সৎ কাজে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন বলেই তাঁর সাহসের সীমানা ছিল আকাশের চেয়েও বিশাল। সেই অসীম সাহসকে পুঁজি করেই বঙ্গবন্ধু মাত্র ৫১ বছর বয়সেই কিংবদন্তী হয়েছিলেন; জনক হয়েছিলেন একটি জাতি আর একটি মানচিত্রের। বঙ্গবন্ধুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা উল্টো ঘুরিয়ে দিলো সেই সততার চাকা। সৎ চিন্তা আর সৎ সাহসে ঢুকে পড়ে ভেজাল!

এখন সৎ চিন্তার সাহসী মানুষ পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেন শাস্তি হিসেবেই মিথ্যে মামলায় ঢোকেন কারাগারে! দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে হন জর্জরিত! সন্তান অপহরণ করে দাবি করা হয় মুক্তিপণ! অবস্থাভেদে কপালে জোটে পুত্র সন্তানের লাশ কিংবা ধর্ষিতা কন্যার মরদেহ! কেউ সাহসী লোকটার পাশে দাঁড়াতে চায় না; না সমাজ, না আইন! উল্টো প্রতিবাদী সাহসী মানুষটাকেই শুনতে হয় 'মহৎ' পরামর্শ, কৌশলী হতে হবে, নইলে যেন শাস্তি হিসেবেই ওই বিড়ম্বনাই ন্যায্য প্রাপ্তি! অথচ কেউ বুঝতেই চান না, সৎ মানুষই সাহসী হন, সাহসী মানুষই প্রতিবাদী হন; আর সেই প্রতিবাদী মানুষ দৃপ্ত পায়ে সরল পথে চলেন, কৌশল কিংবা অপকৌশল তিনি বোঝেন না এবং তার ধারও ধারেন না।

তাহলে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুখ-শান্তি! এখনই বুঝি যথার্থ সময়, বেড়ে ওঠার সময়েই নিজের সন্তানকে অসৎ পথ চিনিয়ে দেওয়া; অসৎ চিন্তা আর অসৎ কাজে ব্রতী করা! অসৎ চিন্তা ও অসৎ কাজই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিষ্কণ্টক করবে, করবে সুখ-শান্তিময়।

একজন মানুষ যখন অসৎ চিন্তা আর অসৎ কর্ম দিয়ে প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হন, তিনি তখন যথার্থই কৌশলী তথা অপকৌশলী তথা বুদ্ধিমান হয়ে পড়েন। অবৈধ অর্থ-সম্পদ রক্ষায় তিনি তখন পুলিশ, সমাজের প্রভাবশালী তথা নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কৌশলী শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক লুটেরা সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হন; তার জীবন হয়ে ওঠে সুখ-শান্তিময়। এক পর্যায়ে তিনিই হয়ে ওঠেন সমাজ-রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। আর সৎ সাহসী প্রতিবাদী মানুষটি 'আহাম্মক' সেজে মেনে নেন একটি বিপর্যস্ত জীবন!

আর তাই নিজের ও নিজের সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যৎ ও সুখ-শান্তির জন্য সন্তানকে এখনই চিনিয়ে দিন অসৎ পথ! অসৎ চিন্তা অসৎ কর্ম হোক তার পাথেয়! আসবেই সেই কাঙ্ক্ষিত সুখ-শান্তি তথা চূড়ান্ত সাফল্য!

(পিএস/এএস/এপ্রিল ১৫, ২০১৬)