১৯ এপ্রিল, ১৯৭১
‘মুজিবনগরে বাংলাদেশের পক্ষ হতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়’
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক :
- কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মালিক মোহাম্মদ কাশেম গভর্ণর হাউজে জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা গভর্ণরকে দলের পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
- পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জে.এ ভূট্টো করাচিতে এক সভায় যারা পাকিস্তানের অখন্ডতার বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের সম্পর্কে সরকারের কাছে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেন। সংকট নিরসনে তিনি সবাইকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হাতকে শক্তিশালী করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে বলেন।
- ঢাকা নগরীর বিভিন্ন মহল্লার শান্তি কমিটির লিয়াজোঁ অফিসার ও আহ্বায়কদের নাম ঘোষণা করা হয়। অ্যাডভোকেট নূরুল হক মজুমদারকে শান্তি কমিটির ৫ নং এলিফ্যান্ট রোড-মগবাজারস্থ কেন্দ্রীয় অফিসের সচিব হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
- সিলেটের সালুটিকর বিমানঘাঁটির দখল নিয়ে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনার মধ্যে দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। পাকিস্তানি বিমানবাহিনী এসময় সিলেটে বোমা বর্ষণ করে। দর্শনায় মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ শেষে পাকসেনারা বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায়।
- মুজিবনগরে বাংলাদেশের পক্ষ হতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সরকারের আদেশ মেনে চলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানান।
নির্দেশগুলো নিম্মরুপ:
১. কোন বাঙালি কর্মচারী শত্রুপক্ষের সাথে সহযোগিতা করবে না। প্রতিটি কর্মচারী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ অনুসারে কাজ করবেন । শত্রু কবলিত এলাকায় অবস্থা বিশেষে বিচার-বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করবেন।
২. সরকারি আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিফৌজকে সাহায্য করবেন।
৩. সকল কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য অবিলম্বে নিকটতম মুক্তিসেনা শিবিরে যোগ দেবেন। শত্রুর সাথে সহযোগিতা করবেন না।
৪. বাংলাদেশ সরকার ছাড়া অন্য কারো বাংলাদেশ থেকে কর, খাজনা ও শুল্ক আদায়ের অধিকার নেই।
৫. যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে নৌ চলাচল সংস্থার কর্মচারীরা কোন অবস্থায় শত্রুকে সাহায্য করবেন না।
৬. নিজ নিজ এলাকায় খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদার ওপর লক্ষ্য রাখবেন।
৭. চুরি, ডাকাতি, কালোবাজারি,মজুতদারির ওপর কঠোর নজর রাখবেন।
৮. ধর্মের দোহাই দিয়ে ও অখন্ডতার বুলি আউড়ে এক শ্রেণীর দেশদ্রোহী মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এদের চিহ্নিত করে রাখুন। এদের সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করুন। তাদের মুক্তিফৌজদের হাতে অর্পণ করুন।
৯. গ্রামে গ্রামে রক্ষীবাহিনী গড়ে তুলুন এবং রক্ষীবাহিনীর সেচ্ছাসেবকদের মুক্তিবাহিনীর নিকটতম ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
১০. শত্রুপক্ষের গতিবিধির খবর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে জানাবেন।
১১. মুক্তিবাহিনীর চলাচলের জন্য চাহিবামাত্র সরকারি যানবাহন হস্তান্তর করতে হবে।
১২. বাংলাদেশ সরকার বা মুক্তিবাহিনী ছাড়া জ্বালানী বিক্রি করা চলবে না।
১৩. কেউ পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অথবা তাদের এজেন্টদের সাহায্য করবে না। যে করবে তাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
১৪. গুজবে কান দেবেন না। চূড়ান্ত সাফল্য সম্পর্কে নিরাশ হবেন না।
১৫. সকল সুস্থ ও সবল ব্যক্তিকে নিজ নিজ আগ্নেয়াস্ত্রসহ নিকটতম মুক্তিবাহিনী শিবিরে রিপোর্ট করতে হবে।
১৬. শত্রুবাহিনীর ধরা পড়া কিংবা আত্মসমর্পণকারী সৈন্যকে মুক্তিবাহিনীর কাছে সপর্দ করতে হবে।
১৭. পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সকল প্রকার যোগাযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হতে পারে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১৮. তথাকথিত পাকিস্তান বেতারের মিথ্যা প্রচারণা আদৌ বিশ্বাস করবেন না।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/এএস/পিএস/অ/এপ্রিল ১৯, ২০১৬)