নিউজ ডেস্ক : আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করেই আসে যেকোনো ধরনের অসুস্থতা। কিন্তু কিছু কিছু অসুস্থতা রয়েছে- যার কবলে এবার পড়লে বেঁচে থাকা প্রায়ই অসম্ভব। স্ট্রোক তেমনি ধরনের অসুস্থতা। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন এনে অনেকাংশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই জানা দরকার এর লক্ষণসমূহ।

স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এতে আক্রান্ত হওয়া মানেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যাওয়া। রোগী একদিকে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যেতে থাকেন, আরেকদিকে তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে থাকেন আত্মীয়-স্বজন-চিকিৎসকেরা। সবচেয়ে পরিচিত স্ট্রোকের মধ্যে পড়ে মস্তিষ্কের শিরায় রক্ত জমাট বেধে যাওয়া। এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কের ওই শিরার আশপাশের কোষগুলো দ্রুত মারা যেতে শুরু করে। এমন রোগীর বেশির ভাগই মারা যান।

তবে প্রাথমিক অবস্থায় স্ট্রোকের লক্ষণ চিহ্নিত করা গেলে প্রাণঘাতী এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আর স্ট্রোক প্রতিরোধের এটাই অন্যতম উপায়। কোন লক্ষণগুলো দেখলে এক মুহূর্তও দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

স্ট্রোকের ধরনভেদে এর লক্ষণও ভিন্ন হতে পারে। তবে এ রোগের কিছু লক্ষণ প্রায় একই। যেমন- চলাফেরায় অনীহা, ভারসাম্যহীনতা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, কথায় জড়তা চলে আসা, এমনকি পুরোপুরিভাবে কথা বলতে অক্ষম হয়ে পড়া স্ট্রোকের অন্যতম লক্ষণ। মুখ, ঠোঁট ও বিশেষত দেহের একটি অংশ অসাড় হয়ে পড়াও স্ট্রোকের লক্ষণ। প্যারালাইসিস, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ও অতিরিক্ত হতাশা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ।

স্ট্রোক একজন ব্যক্তির জীবনে যেকোনো সময় আসতে পারে। তবে কিছু ব্যক্তির জন্য এটা বেশি হুমকি তৈরি করে। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ও ধূমপায়ীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা স্ট্রোকের একটি চিকিৎসা হচ্ছে ‘থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি’, যে চিকিৎসায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুত মস্তিষ্কের জমাট বাঁধা রক্ত গলে যায়। রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয়। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে গেলে ভিন্ন বিষয়) উভয় ক্ষেত্রেই এই থেরাপি বা ওষুধের মাধ্যমে জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে ফেলা হয়। স্ট্রোক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই থেরাপি দেওয়া হলে মস্তিষ্কের ক্ষতি কম হয়। প্যারালাইসিস বা দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা তৈরির বিষয়গুলো কমে যায়। নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা স্ট্রোকের চিকিৎসার বিষয়টিকে বলেন, ‘টাইম ইজ ব্রেইন’।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর জন্য চর্বিবহুল খাদ্য বর্জন ও বেশি বেশি হাঁটা চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শরীর ও মন সুস্থ থাকলে সহজে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

তথ্যসূত্র : হেলথ অ্যান্ড হেলথি লিভিনিং।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১৯, ২০১৬)