মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডাকা দ্বিতীয় দিনের ধর্মঘটে শনিবার রোগিশুন্য হয়ে পড়ছে হাসপাতালটি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দূরদূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন রোগিরা। গরীব অসহায় রোগিরা বাধ্য হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে দোষিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয় চিকিৎসকরা। শনিবার দ্বিতীয় দিনে চিকিৎসকদের ধর্মঘটে রোগিশুন্য হয়ে পড়ছে হাসপাতাল।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, খোন্দকার মাইনুল হাসান নামের এক চিকিৎসককে নিহতের আত্মীয় স্বজনরা লাঞ্ছিত করেছে।

তবে রোগির ছেলে ধীরাজ শিকদার দাবি করেন চিকিৎসকের অবহেলায় তার মা মারা গেছে। তাই তাদের অবহেলায় মৃত্যুর দায় এড়াতে তারা এইসব ধর্মঘট করছে।

শনিবার সরেজমিন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও মেডিসিন ওয়ার্ডে কোন রোগি নেই। লেবার ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগিরাও চলে গেছে। কয়েকজন রোগি থাকলেও তাদের কোন রকম চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে না।

সোহাগ নামের ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত এক রোগি নিয়ে আসলেও তাকে সেবা না দিয়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বলেছে হাসপাতালের লোকজন।

এ দিকে সকাল ১১টায় দোষিদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে মানববন্ধন করেছে চিকিৎসকরা। এছাড়াও তারা বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক মো. কালাম উদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ও নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

ঝর্ণা নামের সিজারের এক রোগির স্বামী মো. আজিজ জানান, শুক্রবার থেকে ডাক্তাররা আসে না। পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখে। হাসপাতালের খাবার সরবারহও বন্ধ। আমরা গরীব মানুষ কোথায় যাবো।

সোবাহান নামে এক রোগির স্বজন বলেন, দোষ করে থাকলে হয়ত একজন করেছে তাই বলে পুরো হাসপাতাল বন্ধ করে দিবে। সব রোগি তো দোষ করেনি।

সুমি নামে এক রোগির বাবা মো. বাচ্চু বলেন, ‘নার্সরা আমাদের বলছে ক্লিনিকে চলে যেতে। আমরা গরীব মানুষ ক্লিনিকের খরচ পাবো কোথায়।’

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শশংক চন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তদের উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলবে। তবে জরুরী বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার দাস বলেন, দোষিদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসুচি চলবে। তবে রোগিদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোর রাতে মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার লাল মিয়া শিকদারের স্ত্রী রেনু বেগমকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ রোগী মারা যায়।

(এএসএ/এএস/এপ্রিল ২৩, ২০১৬)