রাজশাহী প্রতিনিধি :রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার নাইস ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের-শিক্ষার্থী তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন। গত শুক্রবার রাতে হোটেল কর্মচারীদের সহযোগিতায় দুজনকে হত্যার অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলা করেন। মেয়েটিকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয় বলে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সুমাইয়ার বাঁ চোখের ভ্রুর ওপরে গভীর জখমের চিহ্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের আলামত রয়েছে। মেয়েটিকে ধর্ষণের পর শ্বাস রোধ করে বা অন্য কোনোভাবে হত্যা করা হয়েছে। মিজানুরকেও শ্বাস রোধ করে বা অন্য কোনোভাবে হত্যা করা হয়। কক্ষের দরজা বাইরে থেকে চাপ দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। এ ছাড়া দরজা বন্ধ থাকলেও ওই কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করার আরও একটি পথ রয়েছে। অভিযোগে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।

শুক্রবার দুপুরে ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে সুমাইয়া নাসরিন (২০) ও মিজানুর রহমানের (২৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মিজানুরের লাশ ছিল হাত বাঁধা অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো এবং সুমাইয়ার লাশ ছিল বিছানার ওপর বালিশ চাপা দেওয়া। এ ঘটনায় ওই হোটেলের চার কর্মীকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই দিন রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গতকাল শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে ওই তরুণ-তরুণীর লাশ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুজনেরই বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। সেখানে গতকাল মাগরিবের নামাজের পর জানাজা শেষে তাঁদের লাশ দাফন করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম বাদশা বলেন, মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে, এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার মুখমণ্ডল রক্তাক্ত ছিল। তবে ছেলেটি খুন হয়েছে নাকি আত্মহত্যা করেছে, এটা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।

পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বুধবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে হোটেলে ওঠেন মিজানুর ও সুমাইয়া। শুক্রবার দুপুরে চেকআউটের সময় ফোন করলে তাঁরা ফোন ধরেননি। হোটেলের কর্মচারীরা দরজায় কড়া নাড়লেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে লক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই দুজনের লাশ উদ্ধার করে।

মিজানুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আর সুমাইয়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাবা আবদুল করিম গাইবান্ধা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন উপপরিদর্শক।

মিজানুরের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানাধীন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পাঠানপাড়া দবিরগঞ্জ গ্রামে। আর সুমাইয়ার দাদার বাড়ি একই থানাধীন চকচৌবিলা গ্রামে। সুমাইয়ার জন্মের পর তাঁরা সপরিবারে বগুড়ায় স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন।


(ওএস/এস/এপ্রিল২৪,২০১৬)