তারেক হাসান : আমরা যারা প্রবাসে থাকি প্রত্যেকের কিছু না কিছু স্বপ্ন আছে। আর সেই স্বপ্নের উপর ভর করে পাড়ি জমিয়েছি এই প্রবাসে শ্রমের দামে সুখ কিনতে। প্রবাসীরা কতটুকু সুখে আছি?

নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছি মা বাবা, ভাই -বোন, স্ত্রী সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাদের সুখ দেখার জন্য। যে সময় থাকার কথা গতকাল পৃথিবীর আলো দেখেছে যে সন্তান একটু বুকে জড়িয়ে নেবার কথা, আমি প্রবাসের অদৃশ্য চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। এটা কি নয় বাংলাদেশের পথ শিশুদের মত কোন অভিশপ্ত জীবন!

নিজের শিক্ষা জীবন কে নিজে হাতে হত্যা করে, হাতে তুলে নিয়েছি একটা বস্তা মানুষ খাওয়ার পর যা থাকে এখানে সেখানে ফেলে তা পরিষ্কার করি নিজ হাতে। যে দৃশ্য দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল বা ডাস্টবিনের পাশে যেখানে পথ শিশুরা খুজে তাদের ভাগ্যে। দুর্গন্ধ তাদের নাকে প্রবেশ করেনা, প্রবাসীরাও তাদের থেকে আলাদা নয়। পথ শিশুদের যেমন নেই কোন ভবিষ্যৎ, ঠিক প্রবাসীদের নেই কোন ভবিষ্যৎ যেদিন বাহুতে আর শক্তি থাকবেনা কি করবো সেদিন। কে নিবে এই প্রবাসীর ভার।

যখন অহেতুক অশ্লীল বকা শুনতে হয়, ঠিক তখনি মনে পড়ে যায় পথ শিশুদের কথা। আমাদের সমাজে ধনবান কিছু ব্যক্তি আছে তারা পথ শিশুদের মানুষ মনে করেনা, শুধু শুধু গালমন্দ করে আমাদের ভাগ্যেটাও তেমন প্রবাসী হওয়ার অপরাধে। পথ শিশুরা ক্লান্তি এলে যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে, কখনো রাস্তার পাশে, কখনো পার্কের মাঝে, কখনো কখনো খেলতে খেলতে মাঠেই ঘুমিয়ে যায়। তারা বুঝেনা সুখ কি জিনিস, বুঝতেও চায় না কোনদিন।

পথে থাকতে থাকতে পথই হয় ঠিকানা তাই তারা পথ শিশু। খুঁজতে চায় না তারা আর, কে তাদের বাবা মা! পথই তাদের সব, এটাই তাদের পরিচয়। এখন যদি যাই প্রবাসীদের দিকে, যদি আমাদের মা বাবার পরিচয় আছে, কিন্তু আমরা টাকা দিয়ে পথ শিশুর পরিচয় কিনে নিয়েছি। ভোরে উঠে কাজে যাই দুটো রুটি খেয়ে হয়ত তাতে কারো কারো ক্ষুধা মিটেনা, দুপুর হওয়ার আগেই পেটে কিছু থাকেনা, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে। দুপুরে খাবো তার কোন নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। কখনো কাদায়, কখনো ফুটপাতে, কখনো রাস্তার পাশে। খাওয়া দাওয়া শেষে যখন ক্লান্তি আসে দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসে ওমনি শুয়ে পড়ি খোলা আকাশের নিচে ইটে মাথা ঠেকিয়ে... পথ শিশুদের মত।

লেখক : সিংগাপুর প্রবাসী