মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে প্রাথমিক অবস্থাতেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের বড় কেশবপুর মৌজার অধিগ্রহণ করা জমিতে জমির মালিকরা নানা অনিয়ম ও চতুরতার আশ্রয় নিয়ে নতুন-নতুন ঘরবাড়ি তৈরি ও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রেল লাইনের ভুমি অধিগ্রহণের জন্য চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে শিবচর উপজেলার বিভিন্ন মৌজার ২১৩.২৮১৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য ৩ ধারার নোটিশ প্রদান করা হয় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে। পরবর্তীতে যৌথ তদন্ত শেষে বর্তমানে ৬ ধারা চলমান রয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উপর দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মাসেতু সংযোগ প্রকল্পে রেলপথ নির্মাণের জন্য ভুমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু করেছে কর্র্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ শুরুর পর থেকেই নতুন নতুন ঘর-বাড়ি তৈরি করে সরকারের কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু হয়।

ফলে বর্তমানে পদ্মা সেতুর রেল লাইন সংযোগ প্রকল্পে অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে শ্রেণি পরিবর্তন করে নতুন করে ঘর-বাড়ি তৈরির হিড়িক পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি। ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে ৫০ লাখ টাকা পাওয়ার আশায় সক্রিয় চক্রটি অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক নতুন ঘর-বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরো দেখা গেছে, কোথাও মাস তিনেক আগে ফসলি জমি ছিল। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে কাঁচাবাড়ি। আবার কোথাও দালান, কোথাও টিনশেড বাড়ি। ফসলি জমিতে পুকুর কেটে তৈরি করা হয়েছে মৎস খামার। চোখে পড়ে মৎস্য খামারের সাইনবোর্ড। অথচ মাছের খামারে মাছ নেই। এমনকি কোন কোন পুকুরে পানিও নেই।

আবার কোথাও নতুন ঘর তৈরি করে মুরগির খামারের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিলেও খামারে কোন প্রজাতির মুরগি নেই।

শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের ৯৫ নং বড়কেশবপুর মৌজার মৃত্যু রশিদ মাতুব্বরের ছেলে সেলিম মাতুব্বর একটি টিনসেট ঘর তুলেছে। মাস কয়েক আগেও এখানে ছিল ফসলি জমি।

একই মৌজার মৃত্যু করিম বেপারীর ছেলে নুর ইসলাম বেপারী ২টি টিনসেট ঘর তুলেছেন। পাশে একটি মাছের খামারও তৈরি করেছেন। অথচ পুকুরে নেই পানি। খামারে মাছ নেই। পাশে ঝুলে আছে মাছের খামারের সাইনবোর্ড।

এছাড়াও একই মৌজার আব্দুল হক বেপারী ৩টি ঘর তুলেছে। নান্নু মোল্লা ৩টি, ইব্রাহিম মোল্লা ৫টি, আলি মোড়ল ৫টি, আক্তার শিকদার ৪টি টিনসেড ঘর তুলেছেন। সাথে আমের বাগান করেছেন। পাশেই মাছের খামার করেছেন।

শিকদার কান্দি চররঘুনাথপুর এলাকার শাহজাহান মিয়া ৪টি টিনসেড ঘর তৈরি করেছেন। এভাবেই চলছে নতুন নতুন ঘর তৈরি কাজ।

অভিযোগে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করার নির্ধারিত ফসলি ও জলাবদ্ধ পতিত জমি শ্রেণি পরিবর্তন করে ভিটা, আবার কাঁচা বাড়ি-ঘরকে পাকা বাড়ি-ঘরে কিংবা টিনশেড বিল্ডিংকে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “৩ ধারা নোটিশের পর যদি তারা ৪০ তলা বিল্ডিংও করে তাহলে তারা ক্ষতিপূরণ পাবে না। ৩ ধারা নোটিশের আগে আমরা ভিডিও করে রেখেছি। ওই ভিডিও অনুযায়ী ক্ষতি পূরণ পাবে।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এস. কে চক্রবর্তীর কাছে মোবাইল ফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চলতি বছর ১৩ জানুয়ারির পরে ৩ ধারা নোটিশের আগে অধিগ্রহণকৃত জায়গার ভিডিও করে রাখা হয়েছে। তা দেখেই ক্ষতিপূরণ বিল পরিশোধ করা হবে। অযৌক্তিক কোন ধরণের দাবি গ্রহণ করা হবে না।

(এএসএ/এএস/মে ০৪, ২০১৬)