প্রবীর সিকদার


নৌকার মাঝি-মাল্লাদের এ কী হাল! নৌকা বিক্রি করছেন আর নৌকা ডোবাচ্ছেন! বঙ্গবন্ধুর নৌকা নিয়ে এই নির্মম রসিকতা করছেন কারা!

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বিএনপি জামায়াতের অনেক নেতা। অভিযোগ, আওয়ামীলীগের কোনো কোনো প্রভাবশালী নেতা অন্ধকারের নানা দেন দরবারের মাধ্যমে ত্যাগী স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের বঞ্চিত করে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন বিএনপি জামায়াত নেতাদের হাতে। বড় বড় নেতারা অপকর্ম বা ভুল করলেও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা ভুল করেন না। তারা মুখে কিছু না বলে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিয়ে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগকে শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের সদরপুরে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর আগেই অভিযোগ উঠেছিল, সদরপুরে এক কোটি টাকায় এক বিএনপি নেতার কাছে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা বিক্রি হয়েছে। আওয়ামীলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই অভিযোগ করেছিলেন। নৌকা প্রতীক বিক্রির সাথে প্রভাশালীরা জড়িত হওয়ায় তারা তখন প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছিলেন না। তবে উপযুক্ত সময়ে তারা এই অপপ্রক্রিয়ার যথাযথ জবাব দিবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে তখন খবরও প্রকাশ পেয়েছিল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজসহ বিভিন্ন মিডিয়ায়। তখন এ নিয়ে হৈচৈ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় যুবদল সভাপতি জাফর কাজী নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। এলাকার বাতাসে খবর, এই ডিগবাজি মেকানিজমে ৫৫ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সদরপুর স্টেডিয়ামে আওয়ামীলীগের এক বিতর্কিত সমাবেশে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ্‌র হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দেন যুবদল নেতা ও সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাফর কাজী। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইসমাইল ফকির সদরপুরের এই মনোনয়ন বাণিজ্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আশা প্রকাশ করেছিলেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যদি মনোনয়ন বাণিজ্যেরর এই নোংরা বিষয়টি জানতে পারেন, তাহলে কিছুতেই বিএনপি নেতা জাফর কাজীর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবার খায়েস পূরণ হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। কেন হয়নি এ প্রশ্নের উত্তর জানেন সবাই। কিন্তু কেউ মুখ খোলেননি। অবশ্য স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উত্তর দিয়েছেন ব্যালটে।

গত ৭ মে ছিল সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকে ৭৮০৫ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল। আর পরাজিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের বহুল আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সদরপুর উপজেলা যুবদলের সভাপতি জাফর কাজী।

সদরপুরের সাধারণ ভোটারদের প্রশংসা করতে হয়, তারা ব্যালটে রুখে দিয়েছেন এক হাইব্রিড আওয়ামীলীগারকে। একই সঙ্গে তারা আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারকদেরও বুঝিয়ে দিয়েছেন, জনবিচ্ছিন্ন হলে দলের কি পরিণাম হতে পারে।

আমি স্যালুট জানাই সদরপুরবাসীকে; তারা আওয়ামীলীগের হাইব্রিডদের প্রত্যাখ্যান করে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগকে শুদ্ধ ধারায় রেখেছেন। জয় সদরপুরবাসীর জয়, জয় আওয়ামীলীগের জয়।

(ওএস/অ/মে ০৯, ২০১৬)