গোলাম কবির বিলু, পীরগঞ্জ (রংপুর) : পীরগঞ্জে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকদের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়েছে। কর্মসৃজন কর্মসুচীতে সিংহভাগ মজুর-কামলা অন্তর্ভুক্ত থাকায় শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছে না। তার উপর আবার বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার আতংকে রয়েছে তারা। পাশাপাশি ধানের বাজার মুল্য পড়ে যাওয়ায় তৃপ্তির হাসি নেই কৃষকদের মুখে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় এবারে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নেই দিগন্ত জোড়া ধানের ক্ষেত। উপজেলা কৃষি বিভাগের সুত্রে জানা গেছে এবারে ২২ হাজার ৮’শ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো। কিন্তু ধান কাটতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। কারণ মজুর-কামলার সংকট প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। চলতি মওসুমে একজন মজুর কেদু’বেলা খাবারের পর সাড়ে ৩’শ টাকা দিতে হচ্ছে। অপরদিকে বাজারে পানির দরে ধান বিক্রি হচ্ছে।

বর্তমানে প্রতিমন ধান সাড়ে ৩’শ থেকে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ মন ধানে একজন মজুরের দাম মেটানো যাচ্ছে না। উপজেলার বড়আলমপুর গ্রামের কৃষক আহাম্মদ আলী, খুশী মিয়া, চতরার আব্দুস সামাদ মিয়া, দ্বারিকামারীর আশরাফুল ইসলাম জানান- ধানের বাম্পার ফলন হলেও আমরা খুশী হতে পারছি না। কারণ কিষান (কামলা) পাওয়া যাচ্ছে না। তারা (কামলা) কর্মসৃজন কর্মসুচীর কাজ করছে। সেইসাথে বাজারে ধানের মুল্যও কমে গেছে। ধান কাটতে দেরী হওয়ায় ভর বৈশাখ মাসে শিলাবৃষ্টির আশংকায় আতংকিত দিন কাটাচ্ছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দফতর সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে পীরগঞ্জের ১৫ টি ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসুচী শুরু হয়েছে। ওইসব ইউনিয়নে ৪ হাজার ১২৪ জন শ্রমিক কাজ করছে। ওই শ্রমিকরা প্রতিদিন ২’শ টাকায় কাজ করছে। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মসৃজনে কাজ করায় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম বলেন- জুনের ১ম সপ্তাহেই কর্মসৃজন প্রকল্প শেষ হবে। তবে শুক্র ও শনিবার দু’দিন কর্মসৃজন প্রকল্প বন্ধ থাকে। তারা এই দুদিন সংসার কিংবা অন্যের কাজ করতে পারবে। অপরদিকে কিছু শ্রমিক ঢাকায় কিংবা অন্যান্য শহরে রিক্সা চালানো কিংবা ভাসমান কাজে যাওয়াতে শ্রমিক সংকট হয়েছে।

এ ব্যাপারে খালাশপীরের স্বচ্ছল চাষী শফিকুল ইসলাম, আনিছার রহমান মন্ডল বলেন- মজুররা প্রতি একর জমির ধান কাটা এবং বাড়ীতে আনতে ৬ হাজার টাকা নিচ্ছে। আর মাড়াইয়ের খরচ প্রায় ৮’শ টাকা। যদি মেশিনে ধান মাড়াই করা হয়, তবে প্রতি একরে ১ হাজার ২’শ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে গরুর খাবারের জন্য খড় হবে না। কারণ খড়গুলো গুড়ো হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বেশী টাকায় ধান মাড়াই করতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র ঘোষ বলেন- আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সাধ্য মতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি। ধানের বাম্পার ফলনের মাধ্যমে তার প্রতিফলও পেয়েছি। আমরাও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। বৈশাখ মাস, শিলাবৃষ্টির ভয় থাকে। কৃষকরা ঠিকঠাক মতো ধান ঘরে তুলতে পারলে তাদের এবং আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।

(জিকেবি/এএস/মে ০৯, ২০১৬)